ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি

ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার শুরু করার দাবি জানিয়ে সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় অভিভাবকদের সঙ্গে শিশুরাও মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। সোমবার সন্ধ্যায় নগরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যার ৯৫ মাস উপলক্ষে বিচারের দাবিতে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে বক্তব্যের সময় তিনি এ ‌দাবি জানান।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় সহসভাপতি মনি সুপান্থর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, খেলাঘর আসর জেলা কমিটির সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলার সভাপতি হাফিজুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, সমমনার সভাপতি দুলাল সাহা প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম, সহসভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, কবি আরিফ বুলবুল।

রফিউর রাব্বি বলেন, সংবিধানে বিচার পাওয়ার অধিকার, নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই যে সাংবিধানিক অধিকার, এটি কে দেবে? এটি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের পরিচালনায় যাঁরা থাকেন, শাসকগোষ্ঠী তাঁদের। কিন্তু যখন শাসকগোষ্ঠী অধিকার নিশ্চিত করার পরিবর্তে অধিকার হরণ করে, হত্যা, খুনখারাবির সঙ্গে জড়িত তাদের নিরাপত্তা দিতে থাকে, তাদের সহযোগীরা উৎসাহী হয়ে ওঠে। তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকে না, সংবিধান থাকে না, এটি সভ্য দেশ থাকে না।

তিনি বলেন, ‘সরকার প্রতিটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ঘাতকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, আঁতাত করেছে। আমাদের দেশের জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে যে বাহিনী রয়েছে, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী—এদের সবাইকে বিভিন্ন সময় জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। জনগণের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ত্বকীর ঘাতক যাঁরা, এই ওসমান পরিবারের সদস্যরা সরকার দ্বারা পুরস্কৃত হয়ে আইনপ্রণেতা হয়েছেন। এই খুনিরা যখন জনগণের রাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা হন তখন দেশের এই চেহারায়ই হয়। ঘাতকদের যে শাসকগোষ্ঠী প্রশ্রয় দেয়, সেই শাসকগোষ্ঠী প্রকারান্তরে ঘাতক। আমরা সাগর-রুনি, ত্বকী হত্যার সঙ্গে সঙ্গে আশিক ভুলু হত্যার বিচার চাই।’ নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু সাদমান সাকীকে উদ্ধারের দাবি জানান তিনি।

বক্তারা বলেন, ত্বকী হত্যায় গ্রেপ্তার আসামি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও ত্বকীর খুনি আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ত্বকী হত্যার বিচার শুরুর নিদেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখাখাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। পরে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও আসামিদের গ্রেপ্তারে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।