সিলেটে ক্রমিক ভূকম্পন

তোড়জোড়েই দায় শেষ

  • বাংলাদেশকে যে তিনটি ভূকম্পন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, এর মধ্যে সিলেট সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আছে।

  • ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি বিপণিবিতান ১০ দিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হয়েছে।

সিলেট নগরে চার মাস আগে ক্রমিক ভূকম্পন অনুভূত হওয়ার পর ছয়টি বিপণিবিতান ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ সময় নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের ৪২ হাজার ভবনে সমীক্ষা চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতেও তারা উদ্যোগী হয়েছিল। তবে বাস্তবে সে উদ্যোগ আর এগোয়নি।

এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ২৮ মিনিটে সিলেটে আবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। ভূকম্পনটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ক্রমিক ভূকম্পনের পরই সিটি করপোরেশন ভূমিকম্পের ঝুঁকি এড়াতে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। তাৎক্ষণিক কিছু উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীকালে সিটি কর্তৃপক্ষের তৎপরতা বন্ধ হয়ে পড়ে। অথচ বাংলাদেশকে যে তিনটি ভূকম্পন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, এর মধ্যে সিলেট সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় আছে। সে বিবেচনায় কোন ভবন কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ, সেটা শনাক্ত করা অবশ্যই প্রয়োজন।

গত ২১ ও ৩০ মে এবং ৭ জুন সিলেটে মোট আটবার ভূকম্পন অনুভূত হয়। আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা তখন বলেছেন, সাধারণত বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। প্রথম দফায় ভূকম্পনের পর ৩১ মে থেকে নগরের ছয়টি বিপণিবিতান ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১০ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। বিপণিবিতানগুলো হচ্ছে সুরমা মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানসন, রাজা ম্যানসন, সিটি সুপার মার্কেট ও সমবায় ভবন মার্কেট। নগরের জিন্দাবাজার এলাকার জেন্টস গ্যালারি নামের একটি দোকানকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ২৮ মিনিটে সিলেটে আবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।

এরপর এক সভা থেকে ৯ জুন সিটি করপোরেশন এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের ৪২ হাজার ভবনে সমীক্ষা চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। নগরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি এড়াতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগও নেওয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। পরে ১০ জুন শাবিপ্রবির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের দুটি দল নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি বিপণিবিতান পরিদর্শন করে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ শেষে সব কটিকেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন।

শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতানগুলো পরিদর্শনের এক-দুই দিনের ব্যবধানেই বন্ধ থাকা ছয়টি বিপণিবিতান ও একটি দোকান পুনরায় চালু হয়েছে। তবে শাবিপ্রবি ও সিটি কর্তৃপক্ষের সভার চার মাস হতে চললেও নগরের ৪২ হাজার ভবনে সমীক্ষা চালানোর কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ ছয়টি বিপণিবিতানের প্রকৌশলগত বিস্তারিত মূল্যায়নের প্রক্রিয়া গ্রহণের উদ্যোগও থমকে আছে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রকৌশলগত বিস্তারিত মূল্যায়ন করতে বেশ টাকার প্রয়োজন। ছয়টি বিপণিবিতানের মধ্যে একটি সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন, অন্যগুলো ব্যক্তিগত। তাই পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে নিতে টাকা কোথা থেকে আসবে, এ নিয়ে বিপণিবিতানগুলোর মালিক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। এর অংশ হিসেবে মূল্যায়নের জন্য বিপণিবিতানগুলোর নকশা, মাটি পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বিপণিবিতান কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র না দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।

ছয় বিপণিবিতানের বর্তমান অবস্থা

যে ছয়টি বিপণিবিতানকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ১০ দিনের জন্য বন্ধ রেখেছিল, নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পরপরই সেসব দোকানে পুনরায় বেচাকেনা শুরু হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে ত্রুটি সারাতেও বিপণিবিতানগুলো সিটি করপোরেশনকে যথাযথ সহায়তা করছে না বলেও প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ছয়টি বিপণিবিতান কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ, সেটা আমরা শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। সে তথ্য না পেয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়াও আমাদের পক্ষে কঠিন। দ্রুততার সঙ্গে যেন এটি জানা যায়, সে জন্য পুনরায় বিপণিবিতান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নগরের ৪২ হাজার ভবনে সমীক্ষা চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার বিষয়টি কোন পদ্ধতিতে হবে, এ নিয়ে শাবিপ্রবির বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শের অপেক্ষায় আছি।’