‘তোমার কম্বল কোনা গাওত দিয়া আরাম পানু’

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০০ জন শীতার্ত ব্যক্তির মধ্যে কম্বল বিতরণ। মঙ্গলবার দুপুরে ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে।
ছবি: প্রথম আলো

লাঠিতে ভর দিয়ে কম্বল নিতে এসেছিলেন মর্জিনা বেগম (৪৫)। অসুস্থতার কারণে তাঁর বাঁ পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। এবাড়ি–ওবাড়ি ভিক্ষা করে তাঁর সংসার চলে। কম্বল পেয়ে মর্জিনা বললেন, ‘ভাঙা একনা চালাত ছিঁড়া কঁথা গাওত দিয়া কষ্টে আছনুং। তোমরা কারা বাবা, মোক ডাকি আনি কম্বল দিনেন? তোমার কম্বল কোনা গাওত দিয়া শান্তিতে ঘুমাইম।’

মর্জিনার বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পোদ্দারপাড়া গ্রামে। তাঁর স্বামী ছয়মুদ্দিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে এক মাস আগে মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার তারাগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নের ২০০ শীতার্ত মানুষকে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কম্বল দেওয়া হয়। ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়। সেখানেই এসেছিলেন মর্জিনা।

ওই স্থানে কম্বল নিতে এসেছিলেন ফকিরপাড়া গ্রামের মোনা মিয়া। তিনি বলেন, ‘মুই একটা পঙ্গু মানুষ। ভিক্ষা করি খাও। শীতের কাপড়ের তকনে মুই খুব কষ্টে আছনু। তোমার কম্বল কোনা খুব কামোত দিবে বাহে।’

কম্বল বিতরণে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, বুড়িরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেন ও তারাগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বর্ষা রানী।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তারাগঞ্জের ইকরচালী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে।

কম্বল হাতে পেয়ে সেখানেই গায়ে জড়িয়ে নেন রহিমাপুর গ্রামের সারথি রানী। তিনি বলেন, ‘মোর ছাওয়া, স্বামী—কায়ও নাই। ভিখ করি খাও। ঠান্ডাতে জীবন বাইর হয়া যাবার ধরছে। তোমার কম্বল কোনা পানু, ভালোয় হইল। ঠান্ডা থাকি বাঁচিম। মুই যত দিন বাঁচিম, তত দিন তোমার জন্যে দোয়া করিম।’

২৫ বছর আগে ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নপিতোন বেগমের স্বামী মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘আগোত মাইনসের বাড়িত ঘুরি ঘুরি ভিক্ষা করি খাছুন। এল্যা তো হাঁটপারে পাও না। মেম্বার, চেয়ারম্যানেরটে কম্বল চাছনু, পাও না। মোর তো কম্বল কিনারও কোনো সাধ্য নাই। এই জাড়ত তোমার কম্বল কোনা গাওত দিয়া আরাম পানু।’

নদীরপাড় গ্রামের হরিশ চন্দ্র বলেন, ‘মুইও একনা কম্বলের জন্যে কতজনের কাছোত হাত পাতছিনুং। কিন্তুক কায়ও মোর কথা শুনে নাই। তোমরা আইজ মোক কম্বল দিয়া বাঁচাইনেন। তোমার কম্বল কোনা না পাইলে মুই ঠান্ডাত খুবই কষ্ট পানুং হয়।’

কম্বল বিতরণে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর তারাগঞ্জ বন্ধুসভার আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শিপুল ইসলাম, সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, মামুন সরকার, মুরাদ হোসেন, জাজিয়া আক্তার সেতু, জহুরুল ইসলাম, জেবা নাসরিন, সুজন দাস, মাহফুজুর রহমান, মোরছালিন ইসলাম, ইমরান হোসেন প্রমুখ।