তোফায়েল আহমেদের মুখে সেদিনের স্মৃতিকথা শুনলেন হাজারো মানুষ

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে হাজারো মানুষ তোফায়েল আহমেদের মুখে সেদিনের স্মৃতিকথা শুনেছেন। রোববার সকালে ভোলা সরকারি বিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

রোববার সকাল ৯টা। ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে দলে দলে লোকজন জমায়েত হচ্ছে। মাইকে বাজছে দেশাত্মবোধক ও স্বাধীনতার গান। প্রতিটি মিছিলে ঢোল-ডাগর, ব্যান্ড পার্টি। কোনো কোনো মিছিলের সামনে চলছে লাঠি খেলা। সবার কপালে লাল ফিতা আর মুখে আনন্দ-স্লোগান।

উপলক্ষটা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এই দিবস উপলক্ষে ভোলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। ‘নতুন স্বাভাবিক’ সময়ের এই জনসভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিকথা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, ভোলা-১ আসনের সাংসদ ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ভোলায় করোনাকালে এই প্রথম কোনো জনসভায় এত মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন থেকে মানুষ এ সভায় আসেন।

সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১০ জানুয়ারি চিরস্মরণীয়। অনন্য ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এ প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের পরিপূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশিরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারেনি। যেদিন বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন, সেদিনই স্বাধীনতার পূর্ণতা লাভ করেছে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির বর্ণনা দিতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল এক অবিস্মরণীয় দিন। যখন বাংলাদেশের মাটিতে পা দেন, তখন ছিল অভূতপূর্ব মুহূর্ত-ক্ষণ। মুক্ত দেশের নাগরিকদের উচ্ছ্বাস দেখে বঙ্গবন্ধুর চোখে সেদিন বিজয়ী বীরের পরিতৃপ্তির হাসি ফুটেছিল।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর জন্ম না হলে বাংলাদেশিরা হয়তো আজও পাকিস্তানের দাসত্বের শিকলে আবদ্ধ থাকত। ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন, আমরা জানতে পারিনি। ৮ জানুয়ারি আমরা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির খবর পাই।’

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে উপলক্ষে ভোলা শহরে আনন্দ মিছিল বের করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তোফায়েল আহমেদ কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে আমৃত্যু ভোলার মানুষের পাশে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে ভোলার সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সভাপতি দোস্ত মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মমিন, ভোলা পৌরসভার মেয়র জেলা যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গোলদার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বিশাল আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে গিয়ে শেষ হয়।