তিনটি হাসপাতালে ঘুরেও ইকবাল হোসেনকে (৫৫) ভর্তি করাতে পারেননি স্বজনেরা। শেষ পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এই ব্যক্তির। শুক্রবার ভোরের এ ঘটনা সিলেট নগরের।
ইকবাল হোসেন সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি আগে থেকে মূত্রনালির সংক্রমণে ভুগছিলেন। শুক্রবার ভোরে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
মৃত ইকবাল হোসেনের ছোট ভাই জাকির হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে আমার ভাইয়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ইকবালকে হাসপাতালে নিতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন তাঁর ছেলে নাসিব লতিফ। তবে অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন সিলিন্ডারটি বাসায় নেওয়ার পথে পড়ে ভেঙে যায়। ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে আল হারামাইন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভর্তি নেওয়া হয়নি। তাঁকে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যা খালি নেই জানিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ইকবালকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেও চিকিৎসার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে ইকবালকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল হারামাইন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নাহিয়ান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিন-চার দিনে আগে ওই ব্যক্তি হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ওই সময় তাঁর জ্বর ছিল। তাই তাঁকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু তিনি ওই পরীক্ষা করাননি। শুক্রবার ভোরে তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। ওই ব্যক্তির নিবিড় পরিচর্যা (আইসিইউ) কেন্দ্রে নেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের এখানে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়; আইসিইউতে নয়। কারণ, সেখানে অন্য রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের ঝুঁকি এড়াতেই ওই রোগীকে নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ভোরে এমন কোনো রোগী নিয়ে আসা হয়েছিল বলে আমার জানা নেই। আমরা করোনা চিকিৎসার জন্য একটি ভবনে ২০০ শয্যা প্রস্তুত করছি। সেই সঙ্গে ২০টি শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করছি। সরকারের পুরো নির্দেশনা এখনো আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও আমরা করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের চিকিৎসা শুরু করেছি।’
পরিবারের অভিযোগ, তারা গুরুতর অসুস্থ ইকবালকে অক্সিজেন পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারেনি। এমন অবস্থা যেন আর কারও না হয়। এই সংকট ময় মুহূর্তে সবাই যেন মানবিক দিক বিবেচনা করে চিকিৎসাসুবিধা দেয়। তবে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পরিবারটি।
এর আগে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে মৃত ইকবালের ছেলে নাসিব লতিফ নানা অভিযোগ করেছিলেন। বলেছিলেন, বেসরকারি দুটি হাসপাতাল ঘুরে শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়েও তাঁরা সবকিছু বন্ধ পান। ১০ থেকে ১৫ মিনিট সেখানে অবস্থান করার পর এক নিরাপত্তাকর্মী আসেন। তিনি জানিয়ে দেন, হাসপাতালের সবাই ঘুমিয়ে আছেন। তখনই তাঁরা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে জরুরি বিভাগ হয়ে ইকবালকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে ইসিজি করানোর পর ইকবালকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘কোথাও ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। আমি খবর পাওয়ার পর শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে দেখা গেছে, ওই রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়নি। সম্ভবত প্রশাসনিক ভবনের ফটকে গিয়েছিলেন তাঁরা। তারপরও বিষয়টি দুঃখজনক।’