কুমিল্লায় ট্রেন দুর্ঘটনা

তিন শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি, বিদ্যালয়ে শোক

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত মীম আক্তারের মা রূপা আক্তারের কান্না থামছে না। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মীমের নানি ওহিদা বেগম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বাড়াপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে
 ছবি: এম সাদেক

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চার সদস্যের কমিটিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনছার আলীকে প্রধান করা হয়েছে।


তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী–১ মো. আবদুল হানিফ, সংকেত ও টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা জাহেদ আরেফীন পাটোয়ারী ও চিকিৎসা কর্মকর্তা শিবু নাথ।

এর আগে একই ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে তিন শিক্ষার্থী তাসপিয়া আক্তার, মীম আক্তার ও রিমা আক্তারের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শোক পালন করা হয়। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ছিল। তিন শিক্ষার্থীর স্মরণে বিদ্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সাদেকুর রহমান।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর রেলক্রসিং দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির তিন সহপাঠী একসঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল। এ সময় ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মীম, রিমা, তাসফিয়া মারা যায়। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা রেললাইন ও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে। তারা বিজয়পুর রেলক্রসিং এলাকায় রেলওয়ে পদচারী–সেতু করার দাবি জানান।

একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যুর পর দুর্গাপুর গ্রামে চলছে মাতম। সন্তান হারানো মায়েদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গ্রামের পরিবেশ। গত বুধবার কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে মীম আক্তার ও রিমা আক্তারের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। তাসপিয়া আক্তারের জানাজা হয় বরুড়া পৌরসভার অর্জুনতলা গ্রামে।

তাসপিয়া আক্তারের নানা মো. রতন মিয়া বলেন, ‘নাতনিকে আমার বাড়িতে পড়াশোনা করার জন্য এনেছিলাম। এখন লাশ হয়ে ফিরে গেল।’

রীমা আক্তারের মা রেনু বেগম শোকে পাথর। কোনো কথা বলতে চান না। তাঁর এখনো মনে হয়, রিমা আছেন। বিদ্যালয় থেকে এই বুঝি ফিরে আসবে মেয়ে।

মীমের মা রূপা আক্তার বলেন, ‘কোনোভাবেই মনকে বুঝাতে পারছি না, মেয়ে নেই।’

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে ঘুরে প্রথম আলোর আলোকচিত্রী এম সাদেক জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের বিজয়পুর রেলক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশের পুকুরপাড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। লাকসাম–আখাউড়া ডাবল লাইন ওই বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে হয়েছে। বিজয়পুর রেলক্রসিং থেকে ১০০ গজ অদূরে কাটা পড়ে তিন শিক্ষার্থী। তারা বিজয়পুর বাজার দিয়ে ঘুরে রেললাইন পার হতে গিয়ে দুই ট্রেনের মধ্যে পড়ে আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে প্রাণ হারায়। জায়গাটি অরক্ষিত ছিল।