তিন মাসে সিলেটে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত, চাপ বাড়ছে হাসপাতালে

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

সিলেটে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। চলতি বছরের (জানুয়ারি থেকে মার্চ) তিন মাসের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সিলেটে সর্বোচ্চ ৪৪ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত সোমবার ৩ মাসের সর্বোচ্চ ৩৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি হাসপাতালে চাপ বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর সূত্র জানিয়েছে। করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৪০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। আগে এর পরিমাণ ১৫ থেকে ১৭ জনে নেমে গিয়েছিল।

সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মাসের মধ্যে সিলেটে গত সোমবার ৩৪ জন ও আজ বৃহস্পতিবার ৪৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২২ জন। সে হিসাবে দিন দিন সিলেটে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সচেতনতা বাড়ানো না গেলে এবং জনসমাগমস্থল পরিহার ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিলেট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছিলেন ৪০০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ২৩১ জনে। মার্চের প্রথম থেকে বাড়তে শুরু করেছে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা। চলতি মাসে গত সোমবার পর্যন্ত ১৫ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯০ জনের। এর মধ্যে গত সোমবার এক দিনেই শনাক্ত হয়েছে ৩৪ জনের ও গত মঙ্গলবার শনাক্ত হয়েছে ২৬ জনের। সর্বশেষ আজ করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৪ জনের।

গত বছরের ডিসেম্বরে ৬৭৫ জন, নভেম্বরে ৭৬৯ জন, অক্টোবরে ৭৬১ জন, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ১১২ জন, অক্টোবরে ১ হাজার ৪৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এর আগে গত বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝিতে সিলেটে করোনার সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়। পরবর্তী সময়ে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ে সিলেট জেলায় করোনা শনাক্ত হয় ৪ হাজার ১৯১ জনের।
সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালেও বাড়ছে সংক্রমিত রোগীদের চাপ। আজ সকাল আটটা পর্যন্ত হাসপাতালে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৬ জন। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন আরও ১০ জন।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা জন্মেজয় দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মাস ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। হাসপাতালে ১৫ থেকে ১৭ জন রোগী ভর্তি থাকতেন। এমন অবস্থা থাকলে আমরা চলতি মাস থেকে সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার চিন্তাভাবনা করছিলাম। তবে চলতি মাস থেকে করোনার উপসর্গ এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে করোনা উপসর্গ এবং আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে মৃত্যুর হার। আগের তুলনায় খারাপ অবস্থায় আসা রোগীর সংখ্যা কমেছে।’

জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘হাসপাতালে ইতালিফেরত এক প্রবাসী গত শনিবার করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাঁর করোনার নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি এইচআইভি পরীক্ষা করিয়েছি। তাঁর এইচআইভি পজেটিভ ফল এসেছে। তাঁর উপসর্গগুলো দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। বর্তমানে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে অন্যদের থেকে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

সিলেট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটি খুব বেশি, তা বলা যাবে না। কিন্তু আমাদের এখন থেকেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সিলেটের মানুষের মধ্যে চরম উদাসীনতা। এ কারণে আবার সংক্রমণ বাড়ছে বলে ধারণা করা যায়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। সংক্রমণ কিছুটা কমেছে, এমন ভাবনা থেকে অনেকেই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছেন। অনেকের আবার করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল ধারণা আছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলা প্রয়োজন।’