যশোর-বাগআচড়া-সাতক্ষীরা রুট

তিনবার বাস বদল, ভোগান্তি

যাত্রীবাহী বাসে যশোরের চাঁচড়া চেকপোস্ট থেকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ পর্যন্ত যেতে যাত্রীদের পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। ৯৭ কিলোমিটার পথ যেতে যাত্রীদের তিনবার বাস বদল করতে হচ্ছে। যশোর আন্তজেলা বাস সিন্ডিকেট ও সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির ‘ট্রিপ’ দ্বন্দ্বের কারণে ছয় মাস ধরে দুই জেলার মধ্যে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ—দুটিই ব্যয় হচ্ছে যাত্রীদের। পথে পথে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এ রুটে গণপরিবহনে এমন অরাজকতা চললেও, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও দুই জেলার জেলা প্রশাসকদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

ন্যাশনাল ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন প্রতিদিন যশোরের নাভারণ থেকে বাসে নিজ কর্মস্থলে যান। দুই জেলার মধ্যে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সীমান্তবর্তী বাগআঁচড়া বাজারে তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে হুড়োহুড়ি করে সাতক্ষীরার বাসে উঠতে হয়। ফলে ৪৫ কিলোমিটার পথ যেতে তাঁর দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। গিয়াস উদ্দীনের মতো চাকরিজীবীদের গণপরিবহনে চলাচলে এমন ভোগান্তি নিত্যদিনের।

গিয়াস উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস নামের যাত্রীবাহী একটি পরিবহনে আমরা চলাচল করতাম। ছয় মাস ধরে দুই জেলার মধ্যে সেই বাসটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন সাতক্ষীরা ও যশোরের মধ্যে চলাচলে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’ তহুরা বেগম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি সাতক্ষীরা। শ্বশুরবাড়ি যশোরে। আমাকে প্রায়ই সাতক্ষীরায় যাতায়াত করতে হয়। এক বছরের শিশু নিয়ে বারবার লোকাল বাস বদলে যাতায়াত করতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে।’

* যশোর ও সাতক্ষীরা বাস মালিক সমিতির ‘ট্রিপ’ দ্বন্দ্বে ছয় মাস ধরে দুই জেলায় বাস চলাচল বন্ধ।

* ২০১১ সালে ১০ বছরের জন্য যশোর আন্তজেলা বাস সিন্ডিকেট ও সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মধ্যে বাস চলাচল-সংক্রান্ত চুক্তি হয়।

* চুক্তি অনুযায়ী যশোর-বাগআচড়া-সাতক্ষীরা রুটে যশোরের ৫৭টি ও সাতক্ষীরার ৩৬টি বাসের ট্রিপ চলাচল করে।

* সাতক্ষীরার সমিতি তাদের বাসের ট্রিপ বাড়ানোর দাবি জানালে যশোরের বাস সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে তা মানা হয়নি।

* পথে পথে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। নৈরাজ্য ঠেকাতে প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম বলেন, ছয় মাস ধরে চলমান এ দ্বন্দ্বে সাধারণ যাত্রীরা অতিষ্ঠ। সেই সঙ্গে পরিবহনশ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। দুই জেলার সীমান্তে বাস বদল করায় প্রায়ই যাত্রীদের ব্যাগ হারিয়ে যাচ্ছে। এতে বাসের যাত্রীদের সঙ্গে চালক ও তাঁদের সহযোগীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হচ্ছে।

দুই জেলার বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্ব

২০১১ সালে ১০ বছরের জন্য যশোর আন্তজেলা বাস সিন্ডিকেট ও সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মধ্যে বাস চলাচল-সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী যশোর-বাগআচড়া-সাতক্ষীরা রুটে যশোরের ৫৭টি ও সাতক্ষীরার ৩৬টি বাসের ট্রিপ চলাচল করে। ১০ বছর পর চুক্তি নবায়নের আগে সাতক্ষীরার সমিতি তাদের বাসের ট্রিপ বাড়ানোর দাবি জানালে যশোরের বাস সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে তা মানা হয়নি। এ জন্য সাতক্ষীরার সমিতির লোকজন যশোরের কোনো বাস সাতক্ষীরায় ও যশোর বাস সিন্ডিকেটের লোকজন সাতক্ষীরার কোনো বাস যশোর জেলায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ফলে দুই জেলার বাস দুই জেলার সীমান্ত পর্যন্ত চলাচল করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সদস্যসচিব সাইফুল করীম বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমাদের সমিতিতে আরও ২০টি বাস বেড়েছে। ট্রিপ বাড়ানোর কথা জানালে যশোর বাস সিন্ডিকেটের নেতারা তা মানছেন না। যে কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’

যশোর আন্তজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, ‘যশোর সমিতিতে ১২৫টি বাস রয়েছে। এমনিতেই আমাদের অনেক বাস বসে থাকে। সাতক্ষীরার সমিতি বাস বাড়িয়ে ট্রিপ বেশি দাবি করছে। তাদের সমিতিতে বাস বাড়াতে বলেছে কে? তাদের ট্রিপ বেশি দিলে আমাদের বাস তো বসে থাকবে। সমস্যা সমাধানের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার বা দুই জেলার জেলা প্রশাসকদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি যত দূর জানি, সমস্যা সমাধানের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের বসার আহ্বান জানান। কিন্তু যশোর বাস সিন্ডিকেটের নেতাদের কেউ ওই বৈঠকে উপস্থিত হননি। তবে পরিবহনশ্রমিকদের কয়েক নেতা আমার কাছে এসেছিলেন। উভয় পক্ষকে নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে বৈঠকে বসার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’