সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কোটায় লটারির ভর্তি তালিকায় নাম এসেছে তরুনিমা ধরের (৯)। তার অভিভাবক তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য রাজশাহীর সরকারি পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আবেদন করেন। ভর্তির নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভর্তির জন্য সেখানে গেলেই শুরু হয় বিপত্তি। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ভর্তি না নিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন শিশুটির মা। কিন্তু দেড় মাসেও শিশুটি ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি।
বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা শিশুশিক্ষার্থী তরুনিমা ধরের মায়ের নাম অনামিকা সরকার। তিনি রাজশাহী সরকারি শিক্ষা বোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক শাখার শিক্ষক। সরকারি পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে মেয়েকে ভর্তি করার জন্য অনামিকা সরকার গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে একটি আবেদন করেছেন।
ওই আবেদনে অনামিকা সরকার উল্লেখ করেন, তিনি রাজশাহী সরকারি শিক্ষা বোর্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক শাখায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে কর্মরত আছেন। তাঁর মেয়ে তরুনিমা গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সরকারি স্কুলে ভর্তিতে অনলাইন লটারিতে অংশ নেয়। সেখানে অংশ নিয়ে তরুনিমা শিক্ষক কোটায় প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকায় রাজশাহী শহরে প্রথম স্থান লাভ করে। এই ফলাফল তাঁরা টেলিটকের নম্বরের খুদে বার্তার মাধ্যমে জানতে পারেন। এই খুদে বার্তা পেয়ে তাঁরা ২১ ও ২৩ জানুয়ারি সরকারি পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে যান মেয়েকে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা ভর্তি না নিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেন। এ অবস্থায় তাঁরা মেয়ের ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
তরুনিমার মা অনামিকা সরকার অভিযোগ করেন, সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি কমিটির সবাই চান তাঁর মেয়েকে ভর্তি করানো হোক। কিন্তু সরকারি পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এককভাবে তাঁর মেয়ের ভর্তি আটকে রেখেছেন। তাঁরা দেড় মাস ধরে মেয়ের ভর্তির জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানও সরকারি পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ভর্তি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি বারবার বলছেন, তিনি (অনামিকা) নাকি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। তিনি নাকি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁদের নীতিমালায় নেই, তাই তিনি ভর্তি নিতে পারবেন না।
সুযোগ পাওয়ার পরও অনামিকা সরকারের মেয়ে তরুনিমা ধরকে ভর্তি না নেওয়ার বিষয়ে সরকারি পিএন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা বলেন, তিনি কোনো শিক্ষার্থীর ভর্তি আটকে রাখার ক্ষমতা রাখেন না। ভর্তি কমিটিতে থাকা সদস্যরা আপত্তি করেছেন, নীতিমালায় শুধু সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তানেরা ভর্তি হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অনামিকা সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। এ কারণেই ভর্তি নেওয়ায় একটু সমস্যা হচ্ছে। সামনে সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েটিকে ভর্তি করানো হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘যদি কোনো শিক্ষার্থীর লটারিতে নাম আসে, তবে সে নিশ্চয় ভর্তি হতে পারবে। ওই মেয়েটির মা স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার শিক্ষক। কিন্তু নীতিমালায় আছে, এটা বিদ্যালয় হতে হবে। আজ এ বিষয়ে সভা ছিল। বিশেষ কারণে সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটি সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা আশা করি, ওই শিক্ষার্থীর পক্ষেই ফলাফল যাবে।’