বাবা তোজাম্মেল হোসেন চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করে ছেলে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হবেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ছেলে তানজিদ হাসান তামিমের ঝোঁক ছিল ক্রিকেটের প্রতি। ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে মা রেহেনা বেগম নেন অন্য রকম কৌশল। স্কুলের পরীক্ষায় ভালো করলে ছেলেকে স্টেডিয়ামে নিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখানোর আশ্বাস দেন তিনি। খেলা দেখার লোভে তামিম পরীক্ষায় ভালো করতে লাগলেন।
পরে তামিমের মা ক্রিকেট অনুশীলন দেখাতে ছেলেকে নিয়ে যেতেন বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে। স্থানীয় কোচ মোসলেম উদ্দিন তামিমের মাকে স্বপ্ন দেখালেন, তাঁর ছেলে একদিন বড় ক্রিকেটার হবেন। তবে ছেলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বাদ সাধেন বাবা। রাগ করে একদিন ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তবে বাবা রাগ করলেও মা সব সময় ছেলের পাশে ছিলেন। মায়ের ইচ্ছায় পড়াশোনা ও ক্রিকেট একসঙ্গে চালিয়ে গেলেন তামিম।
খেলার প্রতি ছেলের বেশি আগ্রহ পছন্দ করতে পারেননি তোজাম্মেল হোসেন। পরে আরও দুই দিন বাড়ি থেকে ছেলেকে বের করে দেন তিনি। এরপর লেখাপড়ায়ও মনোযোগী হন তামিম। ২০১৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসিতে এবং ২০১৭ সালে সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান তামিম। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (এআইইউবি)।
এরপর বাবার বরফ গলতে শুরু করল। অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর তামিমকে ২৫ হাজার টাকায় ব্যাট কিনে দিলেন তিনি। পরে মা-বাবার উৎসাহ আর বিসিবির জেলা কোচ মোসলেম উদ্দিনের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনা ও ক্রিকেট সমানতালে চালিয়ে যান তামিম।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিমের বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর নিজ গ্রাম বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার কর্পূর (ফাজিলপুর) গ্রামে বইছে খুশির বন্যা।
বাবা তোজাম্মেল হোসেন সোনাতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক। তিনি বললেন, ভেবেছিলেন, ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁকের কারণে তামিম পড়াশোনায় খারাপ করবেন। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফল করায় তাঁর ভুল ভাঙে। ছেলের এ অর্জনে তিনি ভীষণ খুশি।