চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান উড়ালসড়কের র্যাম্পের পিলারে ‘ফাটল’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে। এ দলে প্রতিনিধি দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগকে চিঠি দিয়েছে করপোরেশন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এই চিঠি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কের পিলারে ফাটল নিয়ে ভিন্ন ধরনের মতামত পাওয়া যাচ্ছে। তাই এটি ভালোভাবে যাচাই–বাছাই করার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত দল করা হচ্ছে। এতে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দেওয়ার জন্য চুয়েট ও সওজকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই তদন্ত দলে সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কেউ থাকবেন না।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটে এম এ মান্নান উড়ালসড়কের কালুরঘাটমুখী র্যাম্পের পিলারে ফাটলের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় র্যাম্পের ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় নগরের চান্দগাঁও থানার পুলিশ। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তা বন্ধ রয়েছে। তবে মূল উড়ালসড়ক এবং নিচের সড়কে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে উড়ালসড়কের র্যাম্পের পিলারে কোনো ফাটল পাননি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। র্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালট্যান্টস লিমিটেডের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাটলের মতো যেসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, তা মূলত কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট। আর সাটারিংয়ের জন্য দেওয়া ফোম বের হওয়ার ছবি।
এর আগের দিন মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ ত্রুটি এবং ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে র্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, নকশায় ত্রুটি ও ধারণক্ষমতার বেশি ওজনের গাড়ি চলাচলের কারণে এই ফাটল হতে পারে। তবে নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দাবি করছে, র্যাম্পের পিলারে কোনো ফাটল সৃষ্টি হয়নি। নির্মাণকাজের সময় দেওয়া ফোম সরে গেছে।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকার যানজট নিরসনে ১ দশমিক ৩৩ কিলোমিটারের এই উড়ালসড়ক নির্মাণ করে সিডিএ। নির্মাণকাজ চলাকালেই ২০১২ সালের নভেম্বরে উড়ালসড়কের গার্ডার ধসে ১৬ জন নিহত হয়। ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর উড়ালসড়কটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এই উড়ালসড়ক কার্যকর না হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের দাবির মুখে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৩২৬ মিটার দীর্ঘ ও ৬ দশমিক ৭ মিটার প্রশস্তের র্যাম্পটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এটি দিয়ে উভমুখী যান চলাচল করে। এটি এখন রক্ষণাবেক্ষণ করছে সিটি করপোরেশন।