শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. শাহে আলম (৫৫)। দুবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও তাঁর চিকিৎসা করে জীবনের সব উপার্জন শেষ করেছেন তিনি। ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও মানুষের সহযোগিতায় শাহে আলমের দিন কোনোরকম চলছিল। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ক্ষমতায় এসে তাঁর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির রেশন কার্ড বাতিল করে দিয়েছেন। এখন তাঁর ঘরে চুলা জ্বলা প্রায় বন্ধের পথে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর রেশন কার্ড পুনর্বহালের আবেদন করেছেন শাহে আলম। তাঁর বাড়ি চাঁচড়া ইউনিয়নের চাঁচড়া গ্রামে।
শুধু শাহে আলম নন, প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (১০ টাকা কেজি দরে চাল) ২২২ জন উপকারভোগীর রেশন কার্ড বাতিল করেছেন চাঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের। বাতিল করেছেন ইউনিয়নের দুজন ডিলারকে। ২০১৬ সালে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রিয়াদ হোসেন এসব রেশন কার্ড ইস্যু ও ডিলার নিয়োগ দিয়েছিলেন। কার্ডগুলো পুনর্বহালের দাবিতে বেশ কয়েকজন (কার্ডধারী) ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। তাঁরা বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক রেশন কার্ড ও ডিলার বাতিলের অভিযোগ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে তাঁরা বলেন, বছরের ৫ মাস ১০ টাকা কেজি দরে চাল পেতেন তাঁরা। সরকারি এই সাহায্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেয়েপরে কোনোরকম বেঁচে ছিলেন। অক্টোবরে চাল উত্তোলন করতে গেলে ডিলার তাঁদের সব কার্ড রেখে দেন।
ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মালেক বলেন, ইউনিয়নে অনেক কার্ডধারী ধনী। তাঁরা চাল তুলে আবার বিক্রি করে দেন। ধনীদের কার্ড বাতিল না করে, তাঁদের মতো গরিব মানুষের কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
চাঁচড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রিয়াদ হোসেন হান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ডিলার ছিলেন মো. ইউসুফ ও মো. ইলিয়াছ হোসেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের প্ররোচনায় দুজনের ডিলারশিপ বাতিল করে দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। সেই সঙ্গে নতুন করে ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম ও মাকসুদুর রহমান নামের দুজনকে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
রিয়াদ হোসেন আরও বলেন, ইউনিয়নে মোট ৯৯৪টি রেশন কার্ড ছিল। কোনো কারণ ছাড়াই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৪৫০ জনের রেশন কার্ড বাতিলের সুপারিশ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। কিন্তু ওপর থেকে তা পাস না হওয়ায় ২২২ জনের রেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। কার্ডগুলো বাতিল না হতেই ডিলার নীতিমালা উপেক্ষা করে অসহায় উপকারভোগীদের চাল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। অসৎ উদ্দেশ্যে চাল উত্তোলন করে ডিলারের নিজস্ব গুদামে চাল জমা করে রাখা হয়েছে।
নতুন ডিলার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি নতুন ডিলারশিপ পেয়েছি সত্য। তবে চেয়ারম্যানের নির্দেশেই ২২২ জনের নামের চাল বিতরণ বন্ধ করেছেন। চেয়ারম্যানই তাঁদের রেশন কার্ডের মধ্যে গোল চিহ্ন দিয়েছেন। চাল গুদামে জমা আছে। চেয়ারম্যান যখন দিতে বলবেন, তখন চাল দেওয়া হবে।’
উদ্দেশ্যমূলক নয়, নীতিমালা অনুযায়ী বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে যাচাই-বাছাই করে ২২২ জনের রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন চাঁচড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের। তিনি বলেন, বাতিলের মধ্যে আছেন প্রবাসী, মৃত, যাঁরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একাধিক সুবিধা পান এমন পরিবারের সদস্যরা। তিনি আরও বলেন, ডিলারদের তিনি নন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাতিল করেছেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অবনী মোহন দাস বলেন, তিনি একজন ডিলারকে আরেকটি চাকরি করার কারণে বাতিল করেছেন। অন্য একজন অনিয়মের অভিযোগে আগেই বাতিল হয়েছেন। ওপরের নির্দেশে তিনি চাঁচড়া ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২২২ নামের রেশন কার্ড বাতিল প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যাঁদের নামে একাধিক সরকারি সুবিধাপ্রাপ্তির অভিযোগ আছে, তাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ধনী ও অন্যান্য ইউনিয়নের একাধিক সুবিধাপ্রাপ্তদের বাদ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মরিয়ম বেগম বলেন, তিনি আবেদনপত্রের আলোকে তদন্ত করছেন, যদি রেশন কার্ডের পাশাপাশি ভিজিডি কার্ডপ্রাপ্ত হন, তাহলে রেশন কার্ড বাতিল করবেন। এটাই নীতিমালা।