ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অর্থাভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না কুমিল্লার দুই ছাত্রী। তাঁরা হলেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার তানজিনা ইসলাম ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঈশানচন্দ্রনগর গ্রামের সুমাইয়া আক্তার।
১৪ নভেম্বর তাঁদের বিষয় নির্বাচনের জন্য ডাকা হয়েছে। দুজনই বি ইউনিটে চান্স পেয়েছেন। তানজিনা ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সুমাইয়া জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও চান্স পেয়েছেন।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার বরল্লা গ্রামের প্রয়াত চা বিক্রেতা জয়নুল আবেদীন ও বকুল বেগমের তিন সন্তানের মধ্যে তানজিনা ইসলাম দ্বিতীয়। বড় বোন তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে। তানজিনা টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জোগান। ২০১৭ সালে বরল্লা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৪৫ পেয়েছেন। চলতি বছর নাথেরপেটুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় ২২৪৩তম হয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা নেই তাঁর পরিবারের কাছে। এ নিয়ে হতাশায় পুরো পরিবার। তার ওপর ঢাকায় হলে সিট পাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারটি। তাঁর ছোট ভাই নাজিমুর রহমান কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র। সেও টিউশনি করে মেসে থেকে পড়াশোনা করছে।
বরল্লা গ্রামের বাসিন্দা ও চাঁদপুর সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে ২৩৭৮টি আসন আছে। তানজিনা ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু ভর্তির টাকার জোগাড় নেই।
তানজিনার মা বকুল আক্তার বলেন, ‘ভাত জোগাতে কষ্ট হয়। এরই মধ্যে ছেলেমেয়ে দুটি ভালো করছে। কিন্তু পড়াশোনার খরচ দেওয়া সামর্থ্য নেই। তাই সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিদের কাছে সহযোগিতা চাই।’
>দুই ছাত্রীর একজন হলেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার তানজিনা ইসলাম।
অন্যজন হলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঈশানচন্দ্রনগর গ্রামের সুমাইয়া আক্তার।
এদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঈশানচন্দ্রনগর গ্রামের মাইক্রোবাসচালক ছমির উদ্দিন ও রূপসী বেগমের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটে চান্স পেয়েছেন। তিনি মেধাতালিকায় ২১৮৯তম হয়েছেন। ২০১৭ সালে চৌদ্দগ্রামের আমানগন্ডা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৩২ পেয়েছেন। চলতি বছর এইচএসসিতে চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এরপর সুমাইয়া ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। তাঁর বাবা অসুস্থ। তাই মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার ওপর সুমাইয়ার একমাত্র ভাই শাহাদাত হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। ছোট বোন সুরাইয়া বেগম বীরচন্দ্রনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
ছমির উদ্দিন বলেন, ‘আমি পাইলসের ব্যথায় কাতর থাকি। সব সময় মাইক্রোবাস চালাতে পারি না। মেয়ের ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারছি না। সমাজের মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই।’
সুমাইয়ার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বাবা আমাকেও টাকা দেন। আমি টিউশনিও করি। এরপরও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। টাকা না পেলে আমার বোনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না।’