ঢাকা থেকে ফিরে সবজি চাষ, সফল আবদুল আলীম

আধুনিক পদ্ধতিতে করলা চাষে অভাব ঘুচিয়েছেন আবদুল আলীম। বুধবার বিকেলে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলকাঠোর গ্রামে
 ছবি: প্রথম আলো

অভাবের সংসারে ঠিকমতো খাবার জোটেনি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলকাঠোর নদীপাড়া গ্রামের আবদুল আলীমের (৩৫)। ঘরে নতুন বউ রেখে কাজের সন্ধানে তিনি চলে যান ঢাকায়। সেখানে মাটি বহন করা ট্রলারে শ্রমিকের কাজ পান। তবে ঝুঁকি ও পরিশ্রম অনুযায়ী ভালো মজুরি মেলেনি। তাই ঢাকা ছেড়ে ফেরেন গ্রামে।

পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুই বিঘা জমিতে ২০১৩ সালে করলা, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও শিমের সমন্বিত চাষ শুরু করেন আলীম। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীটনাশকমুক্ত চাষপদ্ধতি কাজে লাগান। কঠোর পরিশ্রম আর পরিকল্পিত সবজি চাষে অর্থনৈতিক মুক্তি মিলেছে তাঁর। একসময় ছাপরা ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও এখন পাকা ঘরে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বেশ ভালোই দিনযাপন করছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আলীম। তাঁর মেয়ে এখন স্কুলে পড়ে। স্ত্রী গৃহিণী।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোনো পরিশ্রমী আবদুল আলীম বলেন, গ্রামে ফেরার পর নিজের পায়ে দাঁড়ানো ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বাড়ির পাশের দুই বিঘা জমিতে বেগুন, মুলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ শুরু করেন। নিজের ১০ হাজার ও ঋণের ২০ হাজার টাকা সবজি চাষে বিনিয়োগ করেন। প্রথম বছরেই মুনাফা আসে। পরের চাষে করলা, টমেটো ও লাউ যুক্ত করেন।

করলা ও অন্যান্য সবজি মিলিয়ে মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সব খরচ বাদে বছরে লাভ থাকছে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
আবদুল আলীম, কৃষি উদ্যোক্তা

আবদুল আলীম জানান, প্রথম দিকে চাষপদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় প্রত্যাশিত ফলন হয়নি। লাভের পরিমাণ এসেছে অপেক্ষাকৃত কম। পরের বছর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আধুনিক চাষপদ্ধতি ও পরিকল্পিত পরিচর্যায় ফলন বেড়ে যায়। এতে তিনি ভালো দাম পান, মুনাফাও বেশ ভালো হয়। সবজি চাষে তাঁর উৎসাহ-উদ্দীপনা আরও বেড়ে যায়।

৪ বছর ধরে ১০ কাঠা জমিতে মাচা পেতে বিষমুক্ত করলা চাষ করে আসছেন আলীম। এই পদ্ধতিতে করলার আকার, আকৃতি ও গুণগতমানসহ ফলন বেড়েছে। তিনি বছরজুড়ে পাচ্ছেন ভালো ফলন ও দাম। তরুণ এই সবজি চাষি জানান, এখন শুধু করলা বিক্রি করে মাসে আয় করছেন দুই লক্ষাধিক টাকা। জয় করেছেন দারিদ্র্যকে।
প্রতিবেশী রিপন আলী বলেন, একসময় অভাব-অনটনে দিনযাপন করতেন আলীম। সবজি চাষ করে সচ্ছলতা এসেছে তাঁর। এলাকার অনেকেই তাঁকে অনুসরণ করে চাষাবাদ করছেন।

তরুণ সবজি চাষি আবদুল আলীমের খেতে থোকা থোকা ঝুলছে করলা। বুধবার বিকেলে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বিলকাঠোর গ্রামে

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, উদ্যমী ও পরিশ্রমী মানুষ আবদুল আলীম। আধুনিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেকে তাঁকে অনুসরণ করে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে এই কৃষি উদ্যোক্তাকে।

আধুনিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন সফল কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আলীম। তিনি বলেন, বর্তমানে সপ্তাহে গড়ে চার মণ করে করলা তোলা হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজারে করলা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। করলা ও অন্যান্য সবজি মিলিয়ে মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সব খরচ বাদে বছরে তাঁর লাভ থাকছে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এবার আরও এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানেও তিনি চাষ করছেন শীতকালীন সবজি।