ঢলের পানিতে বন্দিজীবন

রোববার থেকে উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার নড়াইল ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে গোপীনগর গ্রামে।

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে দ্রুত পানি নেমে গেছে। কিন্তু ওই পানিতে ভাটিতে থাকা নড়াইল ইউনিয়নের ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব গ্রামের এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের পানি ভাটিতে নেমে গত রোববার থেকে নিম্নাঞ্চলের নড়াইল ইউনিয়নের পূর্ব নড়াইল, খড়মা, শিবধরা, গোপিনগর, কাউলিয়াজাম, বটগাছিয়াকান্দা গ্রামে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ওই ছয় গ্রামের তিনটি কাঁচা রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। গোপিনগর থেকে মেগিকান্দা যাতায়াতের সড়কের সোবান মেম্বারের বাড়ি পাশে একটি সেতু ভেঙে দেবে গেছে। এতে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বটগাছিয়াকান্দা গ্রামের গৃহবধূ আছিরন বেগম বলেন, ‘দুই দিন ধইরা বাড়ির উঠানে পানি। রান্নাঘরে পানি। বাড়ি থাইকা বাইর (বের) অয়নের তো কোনো উপায় নাই। চারপাশেই পানি আর পানি। পাশের বাড়ি থাইকা এক বেলা রাইন্দা নিয়ে আয়ি। তিন বেলা খাওয়ন লাগে। পানি না সরায় আমরা বিরাট কষ্টে আছি। সরকারিভাবে ত্রাণ দিলে আমগোর বিরাট উপকার অইতো।’

গোপিনগর গ্রামের কৃষক রফিক উদ্দিন বলেন, ‘নড়াইল নিচু এলাকা হওয়ায় উপজেলার উজানের পানি ভাটিতে আইয়া ছয়টি গ্রামের বাড়িঘরে উঠছে। অহন আমরা পানির মধ্যে আছি। রাস্তায় পানি থাকনে এলাকাবাসী চলাচলও করবার পাইতেছে না।’

পূর্ব নড়াইল গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, বাড়ির চারপাশে পানি, রাস্তাও ডুবে আছে। ছয়টি গ্রামের মানুষ চরম কষ্টে পড়েছে। পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত বাড়িঘর থেকে বের হওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে তাঁরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

নড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, উজানের পানি ভাটিতে নেমে আসায় নতুন করে নড়াইলের ছয়টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। কয়েকটি রাস্তা ও সেতু প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সহযোগিতা করা হবে। তবে পানি সরে গেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, নিম্নাঞ্চল হিসেবে নড়াইলের কয়েকটি গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত ইউপির চেয়ারম্যানদের ইতিমধ্যে ত্রাণের চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেল সড়ক

আমাদের প্রতিনিধি, শেরপুর জানান,গত সপ্তাহের টানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আহাম্মদনগর-দীঘিরপাড় সড়কের প্রায় ৮২ ফুট ভেঙে গেছে। এতে উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার আহাম্মদনগর-দিঘিরপাড় সড়কের নুরুল ইসলামের বাড়ির কাছে একটি নালাসহ প্রায় ৮২ ফুট সড়ক ভেঙে সেখানে খালের সৃষ্টি হয়েছে। খালটি পার হওয়ার জন্য স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি প্লাস্টিকের ড্রাম ও বাঁশ দিয়ে ভেলা তৈরি করেছেন। এখন তাঁরা ওই ভেলার ওপর দিয়ে মানুষ পার করার জন্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা এবং মালামাল পার করার জন্য আলাদা টাকা নিচ্ছেন। তবে যাঁদের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা কাপড় ভিজিয়েই খালটি পার হচ্ছেন।

আহম্মদনগর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় এলাকাবাসীর উপজেলা সদরে যেতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।