চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণপণে চেষ্টা করছিলেন আগুন থামাতে। বড় এ অগ্নিকাণ্ডের খবর পৌঁছে দিতে অনেককেই তখন দেখা যায় ভিডিও ও ছবি ধারণ করতে। তাঁদেরই একজন ডিপোর শ্রমিক অলিউর রহমান। তিনি দীর্ঘ সময় ঘটনাস্থলের অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন। কিছু সময় কথা বলছিলেন আবার কিছু সময় আগুন নেভানোর দৃশ্য দেখাচ্ছিলেন। তাঁর লাইভের ৪০ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় ডিপোর কনটেইনারগুলোতে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর মুঠোফোনের ক্যামেরায় সবকিছু অন্ধকার। কেবল শোনা যাচ্ছিল মানুষের আর্তনাদ।
কনটেইনার ডিপোর ওই বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন অলিউর রহমান। অলিউরের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আশিক আলী। তিনি বিএম কনটেইনার ডিপোর শ্রমিক ছিলেন।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
আশপাশের গ্রামগুলোয় ছাই আর পোড়া গন্ধে বিপাকে শিশু, বৃদ্ধরা
আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটারজুড়ে
ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মী নিখোঁজ, অসুস্থ দুজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায়
সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯, আগুন এখনও জ্বলছে
অলিউরের আত্মীয় ফটিগুলি গ্রামের বাসিন্দা জোনাব আলী প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল (শনিবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে অলিউরের লাইভে তিনি অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য দেখছিলেন। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। এর কিছু সময় পর তিনি লাইভ বন্ধ দেখতে পান।
অলিউরের এক সহকর্মীর নাম রুয়েল। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জোনাব আলী বলেন, রুয়েল খাবারের জন্য ডিপো থেকে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু ফেসবুকে লাইভ করার জন্য অলিউর সেখানে থেকে যান। পরে কনটেইনার বিস্ফোরণে তাঁর মৃত্যু হয়। পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকর্মীরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
অলিউরের বাবা অশিক আলী আজ বেলা তিনটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পর তাঁরা অলিউরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পান। পরে জানতে পারেন, তিনি (অলিউর) বিস্ফোরণে মারা গেছেন। ছেলের লাশ আনতে তাঁরা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হয়েছেন।
সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম প্রথম আলোকে নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে অনেকে চলে গেছেন। ৭০ জন চিকিৎসাধীন। আর ৪ জন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন।
আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে অভিযানে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল।