নোয়াখালীর বসুরহাট

ঠিকাদারি না পেয়েই কি খেপেছেন কাদের মির্জা

আবদুল কাদের মির্জা
ফাইল ছবি

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি উন্নয়নকাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল, অনলাইনে (ই–জিপি) দরপত্রে অংশ নিয়েছে একটিমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মূল্যায়ন শেষে ওই প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ দিয়েছে পাউবো। আবার কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দরপত্রে অংশগ্রহণ না করে কাদের মির্জার লোকজন তাঁদের কাছ থেকে কাজটি নিতে চেয়েছিলেন। সেটি না পেয়ে এখন নানা কথা বলছেন, বাধার সৃষ্টি করছেন।

গত রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে কাদের মির্জা প্রকল্পটি নিয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হকের সমালোচনা করেন কাদের মির্জা। তাঁর দাবি, নোয়াখালীর একজন সাংসদ এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম শামছুদ্দিন ওরফে জেহানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাজটি কিনে নিয়েছেন ফেনীর এক উপজেলা চেয়ারম্যান।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হকের নির্দেশে প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে কাদের মির্জার সঙ্গে পৌরসভার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ হয়। পৌর মেয়র কাদের মির্জাকে প্রকল্পটি উদ্বোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় তিনি (কাদের মির্জা) বলেন, ‘সেখানে যে কাজ করতে আসবে, তার হাত কেটে নেওয়া হবে।’
নাছির উদ্দিন, পাউবোর নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী

পাউবোর সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচে নদীর তীরের (নোয়াখালীর অংশে) ৭০০ মিটার এলাকায় ৭০ হাজার ব্লক স্থাপনের জন্য অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্ধারিত সময়ে একটিমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা পড়ে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ওই প্রতিষ্ঠানকেই গত ডিসেম্বরে ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ব্লক তৈরির কাজ শুরু করেছে।

মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী গোলাম মাওলা (রতন) ফেনীর সোনাগাজীর বাসিন্দা। প্রতিষ্ঠানটির মূল মালিকসহ চারজন মিলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

পাউবোর নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাজস্ব বাজেটে ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যাতে একটিমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যেই দরপত্র জমা দিয়েছে। পরবর্তীকালে তিনি বিষয়টি নিয়ে পাউবোর প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রধান প্রকৌশলীর পরামর্শেই পুনঃদরপত্র আহ্বান না করে একমাত্র দরদাতাকে প্রকল্পের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই কাজের সঙ্গে সোনাগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কাজটি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের লোকজনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আমরা তাঁর সহযোগিতা নিয়ে কাজটি শুরু করতে চেয়েছিলাম। এতে কাদের মির্জা মনে করেছেন, উনি (জহির উদ্দিন) কাজটি কিনে নিয়েছেন। আসলে আমাদের কাজ আমরাই করছি।
গোলাম মাওলা, ঠিকাদার

জানতে চাইলে প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন বলেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হকের নির্দেশে তিনি প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে কাদের মির্জার সঙ্গে তাঁর পৌরসভার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। পৌর মেয়র কাদের মির্জাকে প্রকল্পটি উদ্বোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ সময় তিনি (কাদের মির্জা) বলেন, ‘সেখানে যে কাজ করতে আসবে, তার হাত কেটে নেওয়া হবে।’ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘হলভর্তি লোকের সামনে তিনি একরাম চৌধুরী, জেহান সাহেব, আমাকে জড়িয়ে অনেক কথা বলেছেন। এতে আমি আরও অপমান বোধ করেছি। তিনি নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে বললেন। অথচ তার আগেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গত সোমবার রাতে মুঠোফোনে আবদুল কাদের মির্জা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (পাউবো) যখন প্রস্তাব দিল, আমি সাথে সাথে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। আমি বলেছি, কাজ করতে পারবে না, তোমরা রি-টেন্ডার করো। এখানে কাজ বেচাকেনা বন্ধ। এটা অন্য এলাকায় করো। আমার এলাকায় এগুলো হবে না। তখন লিপটন (সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে ফোন দিয়ে বলল, আমার সাথে বসতে চায়, অর্থাৎ আমাকে কিছু টাকা দিতে চায়। আমি তা প্রত্যাখ্যান করেছি।’

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম শামছুদ্দিন জেহান পাউবোর কাজ কেনাবেচায় জড়িত থাকার বিষয়ে কাদের মির্জার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাউবোর ব্লকের কাজ এমনিতেই কোনো ঠিকাদার করতে চান না। তা ছাড়া ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে যে কেউ দরপত্র দাখিল করতে পারেন। কাদের মির্জা অহেতুক অভিযোগ করছেন।

গত নভেম্বরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর এলাকায় ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচে নদীর তীরের (নোয়াখালীর অংশে) ৭০০ মিটার এলাকায় ৭০ হাজার ব্লক স্থাপনের জন্য অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্ধারিত সময়ে একটিমাত্র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা পড়ে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে ওই প্রতিষ্ঠানকেই গত ডিসেম্বরে ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আর কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক গোলাম মাওলার অভিযোগ, কাজটি বাগিয়ে নিতে না পেরেই খেপেছেন কাদের মির্জা। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দরপত্র দাখিল করে কাজ পেয়েছি। এটা ই-জিপির টেন্ডার। উনাদের (কাদের মির্জা) কিছু লোক কাজটা করতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা দরপত্র দাখিল না করেই আমাদের কাছ থেকে নিয়ে কাজ করতে চান। আমরা কাজ পেয়ে কেন ছেড়ে দিব? আমরা দিইনি। এতেই আমাদের উপর খেপেছে। কিন্তু আমরা কারও বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নাই।’

জানতে চাইলে ঠিকাদার গোলাম মাওলা বলেন, ‘এই কাজের সঙ্গে সোনাগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কাজটি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জের লোকজনের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আমরা তাঁর সহযোগিতা নিয়ে কাজটি শুরু করতে চেয়েছিলাম। এতে কাদের মির্জা মনে করেছেন, উনি (জহির উদ্দিন) কাজটি কিনে নিয়েছেন। আসলে আমাদের কাজ আমরাই করছি। ’

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৩৫-৪০ জন শ্রমিক ব্লক তৈরির কাজে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার ৭০০ ব্লক তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. ইউছুফ। ব্লক তৈরির পর লটারি করে কিছুসংখ্যক ব্লক ঢাকায় বুয়েটে পরীক্ষা করে অনুমোদন সাপেক্ষে তা নদীর তীরে বসানো হবে।