করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। বিধিনিষেধের কারণে শহরে লোকজনের চলাচলও কম। যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁরা বাধ্য হয়েই বেরিয়েছেন। এর ফাঁকে শহরের রাস্তায়-রাস্তার আনাচকানাচে দাপিয়ে বেড়াল এক হাতি। তবে সেটা বন্য নয়, প্রশিক্ষিত। আর সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে পিঠে বসা মাহুত।
সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যেও যাঁরা পথে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের সামনে শুঁড় তুলে সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে হাতিটা। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা শুঁড়ের মাথায় টাকা গুঁজে দিচ্ছেন না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের ছাড়ছে না হাতিটি। আজ বুধবার ঠাকুরগাঁও পৌর শহরের রাস্তায় হাতিটির দেখা মেলে। হাতির এ টাকা তোলাকে মাহুত হাতির ‘লকডাউন’ সেলামি বলে নাম দিয়েছেন।
আজ বুধবার থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে লোকজন ও যানবাহনের সংখ্যা কম ছিল। যাঁরা বের হয়েছেন, যৌক্তিক কারণ না দেখাতে পারলে পুলিশ তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেয়। কোথাও কোথাও জরিমানাও করা হয়েছে। তবে রাস্তায় নেমে আসা লোকজনের অনেকেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে অলিগলিতে চলাচল করতে গিয়ে হাতির সামনে এসে পড়েন। সে সময় তাঁদের হাতিটিকে ২০ থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত সেলমি দিয়ে মুক্তি পেতে হয়েছে। হাতিটি সে সময় লকডাউনের আওতামুক্ত ওষুধের দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান থেকেও সেলামির নামে টাকা তোলে।
শহরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আজ সকালে ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশন এলাকা থেকে হাতি দিয়ে পথচারী, যানবাহন ও লকডাউনের মধ্যে খোলা থাকা দোকান থেকে টাকা তোলা শুরু হয়। এরপর গোবিন্দনগর, কলেজপাড়া, আর্ট গ্যালারি, চৌরাস্তা হয়ে নর্থ সার্কুলার সড়কের স্বর্ণকারপট্টি, নরেশ চৌহান সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক ধরে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হাতিটিকে টাকা তুলতে দেখা গেছে।
পৌর শহরের দইয়ের দোকানের অতুল পাল বলেন, ‘টাকা না দিলে হাতি দোকানের সামনে থেকে সরছিল না। তাই, বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা দিয়েছি।’
শহরের ইজিবাইকচালক মো. কালাম জানান, ‘উপায় না পেয়ে লকডাউনের মধ্যে ইজিবাইক চালাতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু আর্ট গ্যালারি মোড়ে হাতিটি ইজিবাইকটি আটকে দেয়। মাহুত সালামির জন্য টাকা দিতে বলার পর উপায়ন্তর না দেখে হাতির শুঁড়ে ১০ টাকা গুঁজে দিই। কিন্তু হাতিটি টাকা ছুড়ে ফেলে। পরে ২০ টাকা দিয়ে ছাড়া পাই।’
হাতির পিঠে বসা মাহুত আল আমিন জানান, হাতিটা সার্কাসে খেলা দেখায়। এখন সেসব বন্ধ হয়ে আছে। এখানে (ঠাকুরগাঁওয়ে) পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ভোট হওয়ার কথা ছিল। ওই ভোটে একজন হাতি মার্কা নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে ভোট স্থগিত হয়ে গেলে তিনি (আল আমিন) হাতি নিয়ে এখানে আটকে যান। এ সময় হাতির খাবার খরচ জোগাতে হাতিটি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহন থেকে ও দোকান ঘুরে ঘুরে টাকা তুলতে শুরু করেন তিনি। তবে আল আমিনের দাবি, কেউ টাকা না দিলে জোর করা হয় না। হাতি সালাম দিলে সবাই খুশিমনে টাকা দিয়ে দেন। এটাকে লকডাউনে হাতির সেলামি বলতে পারেন।’
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম জানান, হাতিটিকে শহরের বাইরে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।