ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যস্ত সড়কে চরে গবাদিপশু

ঠাকুরগাঁও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদিপশুর দল। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁও শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছে গবাদিপশুর দল। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও শহরের গৃহপালিত গবাদিপশু মাঠে ছেড়ে রাখা হয়। এসব গবাদিপশু ব্যস্ত সড়কে চলাফেরা করে, দাঁড়িয়ে থাকে। এতে শহরে চলাচলকারী যানবাহন ও লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুতগতিতে চলা গাড়ি হুট করে থামিয়ে দিতে হয় সামনে গরু-ছাগল চলে আসায়। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও আছে।

সম্প্রতি পৌর কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে পশু জব্দ করে মালিকদের জরিমানা করেছে। তবু থামেনি গবাদিপশুর অবাধ চলাফেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের চৌরাস্তায় গরুর দল ঘোরাঘুরি করছে। গরুগুলোর জন্য যানবাহন আটকে থাকছে। আবার পথচারীরা দ্রুত হাঁটতে পারছে না। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো এলাকা ও বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়কে গবাদিপশুর ঘোরাফেরা দেখতে পাওয়া যায়। বড় মাঠ, ঘোষপাড়া, কলেজপাড়া, কালীবাড়ি, গোবিন্দনগর ও ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার সড়কগুলোতেও একই অবস্থা দেখা যায়।

শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও যানবাহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের অনেক বাসিন্দা গরু, ছাগল ও ভেড়া পালন করেন। বিশেষ করে গরুর খাওয়ার খরচ বাঁচাতে মালিকেরা দিনে সেগুলো ছেড়ে রাখেন। এসব গরু শহরে ঘুরে বেড়ায়। কয়েক শ গরু বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে। এ কারণে শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে পথচারীরা ভোগান্তির শিকার হয়। গরুর কারণে যানবাহনের ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।

এক গরুর মালিক বলেন, জন্মের পর থেকে গরুগুলো এখানে ছেড়ে রাখা হয়। এখানে এ গরু হারিয়ে যাওয়ার ভয় কম থাকে। এ ছাড়া বাড়িতে রাখলে গরুর খাবারের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়। ছেড়ে পশু পালন করলে সড়কের পাশের ফেলে রাখা বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাবার খায়।

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী অনুশ্রী দাস গতকাল রোববার বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় বলে, কয়েক দিন আগে তাদের স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে একটি গরু গুঁতো দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর থেকে সে রাস্তায় গরু দেখলেই ভয়ে অন্যদিক দিয়ে যায়। গোবিন্দনগরের সবজি আড়তের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক সময় গরু দোকানে দৌড়ে এসে সবজি খেতে শুরু করে। তাড়াতে গেলে গুঁতো দিতে আসে। পরে ঝুঁকি নিয়ে গরু তাড়াতে হয়।

শহরের চৌরাস্তায় মোবাইল বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, কখনো কখনো গরু দল বেঁধে সড়কে ঘোরাঘুরি করে। গরুগুলো প্রায়ই দোকানের ঝাঁপির সামনে মলমূত্র ত্যাগ করে যায়।

জেলা ট্রাক ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এভাবে ব্যস্ততম রাস্তার ওপর সারা দিন গরু থাকলে গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয়। হঠাৎ সড়কের মধ্য চলে আসায় জোরে ব্রেক কষতে হয়। নয়তো গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে পশুগুলো জখম হয়।

শহরের বাসিন্দা আ স ম গোলাম ফারুক বলেন, গবাদিপশুর অবাধ বিচরণ শহরকে সবুজে রূপান্তরের উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত করছে। শহরের সড়ক বিভাজকে লাগানো গাছের চারা খেয়ে ফেলছে পশুর দল।

সম্প্রতি গবাদিপশুর অবাধ বিচরণ রোধে অভিযান চালায় পৌরসভা। সে সময় শহরে অবাধে চলা গবাদিপশু জব্দ করা হয়। পরে সাতজন মালিককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। জরিমানা আদায় করার পর ওই পশুগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরও শহরে থামেনি গবাদিপশুর অবাধ চলাফেরা।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, অভিযান চালিয়ে পশুর মালিকদের সতর্ক করে জরিমানা করা হয়। কিন্তু পশুর মালিকদের টনক নড়েনি। প্রয়োজনে আবার অভিযান হবে।