ট্রাক-পিকআপ এলেই গাদাগাদি করে উঠছে মানুষ

শ্রমিকেরা যে যেভাবে পারছেন, কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ট্রাক–পিকআপ ভ্যানে করে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। শনিবার দুপুরে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায়
প্রথম আলো

বগুড়া থেকে জামালপুর হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন আশরাফ আলী। বাড়ি থেকে কখনো হেঁটে, কখনো ইজিবাইকে আবার কখনো নদী পার হয়ে জামালপুর পৌঁছেছেন। এপারে এসে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কোনো যানবাহন নেই।

আশরাফ আলী বলেন, মাঝেমধ্যে ট্রাক বা পিকআপ ভ্যান আসছে। সেখানে হুড়োহুড়ি করে মানুষ উঠে গেছে। তারপর আবার ভাড়া ৬ থেকে ৭ গুণ বেশি। কারও মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। রোববার থেকে হঠাৎ কারখানা খুলে দেওয়ার কারণে তাঁদের এত কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। চাকরি বাঁচাতে হলে তো সবাইকে যেতে হবে। তাই তো কেউ কোনো কিছু তোয়াক্কা করছেন না।

অনেকে গাড়ি না পেয়ে হাঁটছেন। জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় শনিবার দুপুরে

শনিবার বেলা ১১টার থেকে ১টা পর্যন্ত জামালপুর শহরের পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ঢল নেমেছে। এ এলাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যেতে হয়। সকাল থেকে জামালপুর, শেরপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ জড়ো হয়েছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ছোট গাড়ি ভাড়া করে এসব মানুষ ছুটছে ঢাকায়।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহদুরাবাদ এলাকার আকলিমা বেগম। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ভোরে রওনা দিয়ে তিনি ভেঙে ভেঙে বেলা ১১টার দিকে পুরোনো ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছান। কিন্তু সেখান থেকে তিনি কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, কারখানা খুলে দেবে, আগে থেকেই বললেই হতো। তাহলে তো হঠাৎ করে এমন কষ্টের মধ্যে পড়তে হতো। টাকা দিয়েও কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও কত দুর্ভোগ। তাঁর মতো শত শত শ্রমিকের একই অবস্থা।

চালক শামীম আহম্মেদের ট্রাক ভর্তি হয়ে গেছে যাত্রীতে। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে নেবেন। তিনি বলেন, যাত্রীরা জোর করে ট্রাকে উঠে পড়েছেন। তাঁদের ময়মনসিংহ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। পুলিশ বাধা না দিলে নিয়ে যাওয়া যাবে।

সিএনজিচালক আজগর আলী প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন। তিনিও ময়মনসিংহ পর্যন্ত নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘গাড়ির থেকে যাত্রী অনেক বেশি। ফলে ভাড়াও অনেক বেশি। যাত্রীরা জোর করেই উঠে পড়েছেন।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম খান বলেন, সব স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তবে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার কারণে শ্রমিকেরা সড়কে সড়কে ভিড় করছেন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি পালনে সব ধরনের চেষ্টা করছেন।