শ্রমিকেরা যে যেভাবে পারছেন, কর্মস্থলমুখী হচ্ছেন। আমবোঝাই ট্রাকে করে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছিলেন অনেকে। আজ শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুরের চড়পাড়ায়
শ্রমিকেরা যে যেভাবে পারছেন, কর্মস্থলমুখী হচ্ছেন। আমবোঝাই ট্রাকে করে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছিলেন অনেকে। আজ শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুরের চড়পাড়ায়

ট্রাক-পিকআপে করে শত শত শ্রমিক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মালতিডাঙা গ্রামের শ্রমিক মো. আবু হানিফ। কাজ করেন গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর শুনতে পান, কাল রোববার থেকে তাঁর কর্মস্থলে কাজ চলবে। আজ শনিবার ভোরে তাই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিনি। শুধু হানিফ নন, তাঁর মতো শত শত শ্রমিক কারখানা খুলে যাওয়ার খবরে ট্রাক–পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে কর্মস্থলে ফিরছেন।

হানিফ বলেন, অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় এলাকা থেকে একটি ট্রাকে ওঠেন তিনি। পথে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার চড়পাড়া এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ট্রাকটি আটক করে। ট্রাকে নারী–শিশুসহ অন্তত ৩০ যাত্রী। আইন অমান্য করে ট্রাকে যাত্রী তোলার অভিযোগে জরিমানা করে পুলিশ ট্রাক ছেড়ে দেয়। তাঁর ভাষ্য, ট্রাকচালকেরা যার কাছ থেকে যেমন পারছেন ভাড়া নিচ্ছেন। তবে সেটা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার কম নয়।

ওই ট্রাকের চালক হরিপদ বলেন, সবাই ট্রাকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য তিনিও যাত্রী তুলেছেন।

কঠোর বিধিনিষেধের নবম দিনে আজ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কের চিত্র এমন। এই দফায় বিধিনিষেধ শুরুর পর আজ মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি যানবাহন দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকেই মহাসড়কে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে করে প্রচুর মানুষ ঢাকামুখী হয়েছেন। মহাসড়কে ঢাকা শহরে চলাচলকারী কিছু বাসকে উত্তরাঞ্চলের দিকে যেতে দেখা গেছে। এসব বাস বেশি ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে ফিরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সকাল ৯টার দিকে আমবোঝাই একটি ট্রাকের ওপর নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জন যাত্রী ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পুলিশ ট্রাকটি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। যাত্রীরা জানান, তাঁরা সবাই গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। পুলিশ ট্রাকের ওপর থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। একই সঙ্গে ট্রাকের চালককে জরিমানা করে। শ্রমিকেরা নিরুপায় হয়ে হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন।

শ্রমিকদের মধ্যে গাজীপুরের অনন্ত গ্রুপে কর্মরত একজন বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা জানতে পারেন, কাল রোববার থেকে কারখানা খোলা। এ জন্য তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকের মালামালের ওপর যাত্রী হয়েছিলেন।

ওই ট্রাকের চালক রুবেল মিয়ার ভাষ্য, তিনি আম নিয়ে ঢাকার কারওয়ান বাজারে যাচ্ছেন। পথে সিরাজগঞ্জে চা খাওয়ার জন্য গাড়ি থামান। সেখান থেকে শ্রমিকেরা জোর করে তাঁর গাড়িতে ওঠেন।

ঢাকামুখী বাসটির ছবি আজ শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার বাওয়ার কুমারজানী-দেওহাটা থেকে তোলা

মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার কুর্নী থেকে দেওহাটা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, মহাসড়কে চলাচলকারী ট্রাক-পিকআপ ভ্যানে শ্রমিকদের উপচে পড়া ভিড়। থেকে থেকে উত্তরাঞ্চলমুখী কিছু খালি বাস যাচ্ছে। আর ঢাকামুখী যাত্রীবাহী দু–একটি বাস দেখা যায়। গতকাল দিনভর যেখানে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যান, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস গড়ে প্রতি মিনিটে উভয়মুখী ৮-১০টি করে চলাচল করছে, সেখানে আজ সকাল থেকে তা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।

মির্জাপুরের চড়পাড়া এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ১০টি মামলা করেছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ একটি ট্রাক আটক করে জরিমানা করে। আজ শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার চড়পাড়া এলাকায়

মির্জাপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. শওকত হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যে বিধিনিষেধ চলছে, তার অংশ হিসেবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে লোকজন ঝুঁকিপূর্ণভাবে কোথাও না যান। আইন উপেক্ষা না করে যাতে তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করেন। আজ দেখছি যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। ট্রাকের ওপরে করে লোকজন যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। আমরা লোকজনকে বোঝাচ্ছি তাঁরা যাতে এভাবে না যায়। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’