টোপ পার্টি নিয়ে পুলিশের কোনো উদাসীনতা নেই

মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক শ যুবক জড়িয়ে পড়েছে ডিজিটাল প্রতারক চক্র। তাঁরা মূলত নানা কৌশলে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় লোকজন এই প্রতারক চক্রের নাম দিয়েছেন ‘টোপ পার্টি’।

মাগুরা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার সীমান্তে গড়াই নদঘেঁষা এই এলাকার কয়েক শ যুবক জড়িয়ে পড়েছেন প্রতারণার সঙ্গে, যা ছড়িয়ে যাচ্ছে আশপাশের এলাকাতেও। এ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর মাগুরা প্রতিনিধি কাজী আশিক রহমান

প্রশ্ন

সীমান্ত এলাকায় ডিজিটাল প্রতারক চক্রের বিস্তারের কারণ কী বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার যেসব এলাকায় ডিজিটাল প্রতারণা চক্র সক্রিয় রয়েছে ওই এলাকাটি ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার সীমান্তবর্তী। মাঝে রয়েছে নদী। এলাকাটি চরাঞ্চল ও দুর্গম। যেখান থেকে পালানো সহজ। পুলিশ যখন এসব এলাকায় অভিযানে যায়, খবর পেলে অল্প সময়ের মধ্যে নদী পার হয়ে সহজেই অন্য জেলায় পালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়টি প্রতিরোধ করতে সংশ্লিষ্ট জেলা ও থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে যৌথভাবে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছি আমরা।

প্রশ্ন

এসব অপরাধীদের বিষয়ে জেলা পুলিশের কোনো উদাসীনতা আছে বলে মনে হয়?

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: একদমই না। প্রায়ই ওই এলাকায় পুলিশ অভিযান চালায়। এসব অভিযানে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যাদের সন্দেহভাজন মনে হয়, তাঁদের কিন্তু ডিজিটাল প্রতারণাসংক্রান্ত কোনো মামলায় আসামি করতে পারি না। তাঁদের সন্দেহজনক গতিবিধি সংশ্লিষ্ট আইনে আদালতে পাঠানো হয়। গত এক বছরে এমন ৬০ থেকে ৭০ যুবককে আটক করে পুলিশ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখানে পুলিশের কোনো উদাসীনতা নেই।

প্রশ্ন

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এসব অপরাধী বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কোনো চাপ আছে কি না?

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: কোনো চাপ নেই। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেই।

প্রশ্ন

এ প্রতারণা বন্ধে প্রযুক্তিগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আছে বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: হ্যাঁ, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে। তাদের সিকিউরিটি ফিচার আপডেট করতে হবে। একটা অ্যাকাউন্টের একাধিক অ্যাপে লগইন করার পথ বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ একটি অ্যাকাউন্টে যেন একাধিক মোবাইল বা অ্যাপ দিয়ে প্রবেশ করা না যায়। এটা হলে প্রতারণার ৯০ ভাগ পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন

প্রতারণা যারা করছে, তারা এক এলাকায় আর প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা অন্য এলাকায় হওয়ায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। এটা সমাধানের উপায় কী?

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: সমাধানের উপায় আছে। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় কেউ যখন প্রতারণার শিকার হবেন, তাঁর উচিত হবে সেখানে থানায় গিয়ে মামলা করা। মামলা করলে তদন্ত যদি ঠিকভাবে হয়, আসামি আটক হয় এবং ভুক্তভোগী যদি আদালতে ঠিকভাবে সাক্ষ্য দেন, তাহলে সব অপরাধী শাস্তি পাবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী অল্প টাকা প্রতারণার শিকার হলে মামলা করতে যান না, মামলা করলেও সাক্ষ্য দিতে যান না। এ কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়।

প্রশ্ন

আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বিষয়ে পুলিশের কোনো কার্যক্রম বা পরিকল্পনা আছে কি?

মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: এ বিষয়ে পুলিশের নিয়মিত সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিটি থানায় আমাদের ওপেন হাউস ডে ও কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে অনুষ্ঠান হয়। সেখানে আমিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা নিয়মিত ডিজিটাল প্রতারণার কুফল, ঝুঁকি নিয়ে সচেতন করা হয়। যেখানে সমাজ সচেতন ব্যক্তি, ধর্মীয় নেতারা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত থাকে। সেখানে অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি এ ধরনের কার্যক্রম ছেড়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক ও সুশীল সমাজের মানুষ সচেতন হলে অপরাধ কমে আসবে।

প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।