কক্সবাজারের টেকনাফে জেলেদের ফেলা টানাজালে ৯০টি লাল কোরাল মাছ ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে এই মাছ কোরাল ও ভেটকি দুই নামেই পরিচিত। তবে চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকজন এই মাছকে লাল পানসা, রাঙা ছইক্কা বা রাঙাচয় নামে চেনে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বাহারছড়ার জাহাজপুরা সমুদ্রসৈকত এলাকায় হেলাল উদ্দিনের মালিকানাধীন জালে মাছগুলো আটকা পড়ে। তিনি উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকার বাসিন্দা। প্রতিটি মাছের ওজন সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় কেজি। মাছগুলো হেলাল উদ্দিন বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায়।
হেলাল উদ্দিন বলেন, আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত এলাকায় কয়েকজন জেলে মিলে তাঁর টানাজালটি নৌকা থেকে সাগরের পানিতে ফেলেন। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলে আবদুল করিম।
জেলে আবদুল করিম বলেন, তাঁর নেতৃত্বে ফেলা টানাজালটির দুই পাশে দুটি রশি ধরে জেলেরা টানতে থাকেন। একপর্যায়ে জালটি ভারী হয়ে ওঠে এবং আটকা পড়া মাছ ছটফট করতে থাকে। পরে জালটি টেনে তুলতেই দেখা যায়, প্রচুর লাল কোরাল উঠেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন একনজর মাছগুলো দেখতে সৈকতে ভিড় জমায়।
প্রতিটি মাছের ওজন সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় কেজি। মাছগুলো হেলাল উদ্দিন বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায়।
হেলাল উদ্দিন বলেন, জালে আটকা প্রতিটি মাছের ওজন সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় কেজি। ৯০টি মাছের একত্রে ওজন সাড়ে ১৩ মণ হয়েছে। ৯০টি মাছের দাম হাঁকিয়েছিলেন ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শেষ পর্যন্ত আবদুল আমিন নামের এক মৎস্য ব্যবসায়ী ২ লাখ ৯০ হাজার টাকায় মাছগুলো কিনে কক্সবাজারে নিয়ে গেছেন।
মৎস্যব্যবসায়ী আবদুল আমিন বলেন, বর্তমানে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারে বেড়াতে আসছেন। খাবারের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে এ মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে কক্সবাজার নিয়ে গেছেন মাছগুলো। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ মাছের জন্য আগাম বুকিং দিয়েছে। কাল বুধবার থেকে মাছগুলো হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। বর্তমানে মাছগুলো কক্সবাজার ফিশারিজ ঘাটে মজুত রাখা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাহারছড়ার জাহাজপুরা সৈকতে এক জেলের টানাজালে আবারও লাল কোরালের ঝাঁক আটকা পড়ার খবর শুনেছি। সুস্বাদু কোরাল কিংবা ভেটকি মাছের কদর দেশব্যাপী। বঙ্গোপসাগরের গভীর জলের মাছ কোরাল সব সময় হাটবাজারে পাওয়া যায় না। এ জন্য এই মাছের দাম কিছুটা বেশি। মাছটি সাধারণত ১ থেকে ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে।’
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Lates calcarifer। এই মাছ উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল, বিশেষত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেখা যায়। তা ছাড়া এশিয়ার উত্তরাঞ্চল, কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্ব আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলেও এদের দেখা যায়।
৩ নভেম্বর সেন্ট মার্টিনের জেটির উত্তর পাশে সমুদ্রসৈকত এলাকায় স্থানীয় জেলে রশিদ আহমদের টানাজালে ধরা পড়েছিল ২০৪টি লাল কোরাল। পরে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় মাছগুলো বিক্রি করা হয়। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল সাতটার দিকে বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন চ্যানেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রিপাড়া বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুবের ট্রলার এফবি রিয়াজ থেকে ফেলা জালে ১৯৮টি লাল কোরাল ধরা পড়েছিল।
আরও দেখুন...