কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দৈংগ্যাকাটা বনাঞ্চলের পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই এক যুগ ধরে ইট উৎপাদন করছে দুটি ইটভাটা। ২২ নভেম্বরের মধ্যে ইটভাটা দুটি ভেঙে ফেলতে জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের (তিন সচিবসহ) ১০ জনের প্রতি ৮ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা দুটির কিছু অংশ ভেঙে দিলেও বিকেলে ভাটা দুটিতে পুনরায় শুরু হয় ইট উৎপাদন।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গতকাল দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. এরফানুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একটি দল দৈংগ্যাকাটার আবুল কাশেমের মেসার্স এএইচবি ব্রিকস এবং আবুল হাশেমের মেসার্স এমকেবি ব্রিকসে অভিযান চালান। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, ইটভাটা দুটি সম্পূর্ণভাবে ভাঙার কথা থাকলেও এক্সকাভেটর দিয়ে ভাটা দুটির ইট পোড়ানোর কিছু অংশ ভাঙা হয়। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে কাঁচা ইট তৈরির জায়গা নষ্ট করেন। বেলা একটার দিকে ম্যাজিস্ট্রেটসহ ফায়ার সার্ভিসের লোকজন চলে গেলে ভাটা দুটিতে পুনরায় ইট তৈরি হয়।
জানতে চাইলে মো. এরফানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানে গিয়ে অবৈধ ইটভাটা দুটি বন্ধে আংশিক স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এ সময় কিছুসংখ্যক কাঁচা ইট নষ্ট করা হয় এবং মালিকপক্ষকে ডেকে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ইটভাটা দুটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযান পরিচালনা শেষে ফিরে আসার পর ইটভাটার মালিকপক্ষের লোকজন পুনরায় ভাটা দুটি মেরামতের মাধ্যমে ইট তৈরির কাজ চালাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। কাল সোমবার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আবারও ইটভাটা দুটি বন্ধ করতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাটা দুটিতে ইট তৈরি হচ্ছে। ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বনাঞ্চলের পাশে তৈরি ইটভাটার কারণে পাহাড়ি বন ও সামাজিক বনায়ন উজাড় হচ্ছে। ইটভাটাসংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি সরকারি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, ফসলি জমি ও লোকবসতি।
ইটভাটা দুটির মালিক দৈংগ্যাকাটার হায়দার আলীর দুই ছেলে আবুল হাশেম ও আবুল কাশেমকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। দুজনের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে একটি ভাটার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘গতকাল দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর থেকে পুনরায় ইট তৈরি শুরু হয়। আজ সকালে কয়েক হাজার ইট বিক্রি হয়েছে। ভাটা দুটির কোনোটির বৈধ কাগজপত্র নেই। প্রায় ১২ বছর আগে ভাটা দুটি তৈরি হয় দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায়। বন, পরিবেশ ও প্রশাসানের লোকজনকে ম্যানেজ করেই চলছিল ভাটাগুলো।’
হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২২ নভেম্বরের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা দুটি ভেঙে ফেলা সম্ভব কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনামতে টেকনাফের অবৈধ ইটভাটা দুটি ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি চলছে। কাল বিকেলের মধ্যে ইটভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। ইটভাটা দুটি উচ্ছেদের সময়সীমা নির্ধারণ আছে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।