টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল টিকাগ্রহীতাদের তালিকা তৈরি। সেই কাজ পুরোপুরি হয়নি। কাল শুরু হচ্ছে টিকাদান।
প্রতি জেলায় বা উপজেলায় কত মানুষ করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তা গতকাল রোববার পর্যন্ত জানতে পারেননি জেলা-উপজেলার টিকাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে নিবন্ধন করা ব্যক্তিরা জানতে পারছেন না, কবে নাগাদ তাঁরা টিকা নিতে পারবেন। এ পরিস্থিতিতে আগামীকাল রোববার দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে।
প্রস্তুতির ঘাটতি দেখা যাচ্ছে নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে এবং তথ্য পাওয়ার বিষয়েও। গতকাল কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও দাকোপ উপজেলার টিকা কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা দুই দিন আগে ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন কাজে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু এই তিন উপজেলার কর্মকর্তারা জানেন না কতজনের নিবন্ধন হয়েছে।
টিকার জন্য গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে দুই লাখ ৬০ হাজার ৪৩৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮৯ হাজার ২৩১ জন এবং বাকি সাত বিভাগে ১ লাখ ৭১ হাজার ২০৫ জন নিবন্ধন করেছেন।
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে ৫৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক এবং ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সংযুক্ত জনপ্রতিনিধি ও অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিবন্ধন করা হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কতজন নিবন্ধন করেছেন, তা জানা যাচ্ছে না। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে জানা যাবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভাগের ১০টি জেলায় নিবন্ধন ভালোই হয়েছে। কিন্তু ঠিক কত হয়েছে, তা বলতে পারছি না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা জানানো হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ নিবন্ধনের কাজটি তদারকি করছে। অনলাইনে টিকার নিবন্ধনের জন্য একটি অ্যাপ চালু করার কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। কিন্তু মানুষ এখনো সেই অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ নিতে পারেননি। অ্যাপটি চালু হয়নি। টিকা গ্রহণে আগ্রহীরা সুরক্ষা ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করছেন।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, টিকার জন্য গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে দুই লাখ ৬০ হাজার ৪৩৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮৯ হাজার ২৩১ জন এবং বাকি সাত বিভাগে ১ লাখ ৭১ হাজার ২০৫ জন নিবন্ধন করেছেন।
নিবন্ধনের ব্যাপারে জানতে চাইলে খুলনার দাকোপ উপজেলার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কতজন নিবন্ধন করেছেন, এটা জানতে পারলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হতো। প্রায় একই কথা বলেছেন জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কর্মকর্তা। তাঁরা বলেছেন, নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের একটি পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা। সেটা তাঁরা পাননি।
দিনে ৮০০ থেকে ১২০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু আমরা কোনো তালিকা পাইনিনাজমুল করিম, বিএসএমএমইউর উপপরিচালক (হাসপাতাল)
উপজেলা পর্যায়ে টিকা কমিটির সভাপতি ইউএনও এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সদস্যসচিব। জেলা পর্যায়ে সভাপতি ও সদস্যসচিব যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর এমআইএস কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তারা নিবন্ধনের বিষয় নিয়ে কাজে ব্যস্ত। এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার রাতে সম্ভব না হলে শনিবার অবশ্যই জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছে নিবন্ধনের তথ্য জানতে পাসওয়ার্ড পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
নিবন্ধিত ব্যক্তিদের একটি টিকাদান কার্ড পাওয়ার কথা। সুবিধামতো তিনি তা প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। তিনি কবে কোন কেন্দ্রে টিকা পাবেন, তা তাঁর মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তায় জানিয়ে দেওয়া হবে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে এই বার্তা পাঠানো হয়নি বলে জানা গেছে।
এই বার্তা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হবে, তা স্পষ্ট নয়। ৪ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন করা ধানমন্ডির একজন বাসিন্দার টিকা কার্ডে বলা আছে, তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে টিকা নিতে হবে। যোগাযোগ করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে তাঁকে বলা হয়েছে, বিএসএমএমইউ থেকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে টিকা দানের তারিখ জানানো হবে।
এমআইএস থেকে এই খুদে বার্তা পাঠানো হবেমিজানুর রহমান, এমআইএসের পরিচালক
এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউর উপপরিচালক (হাসপাতাল) নাজমুল করিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, টিকাগ্রহীতাদের কাছে খুদে বার্তা পাঠানোর কোনো নির্দেশনা তাঁদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেন, ‘দিনে ৮০০ থেকে ১২০০ মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি আমাদের আছে। কিন্তু আমরা কোনো তালিকা পাইনি।’
চট্টগ্রাম বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিভিল সার্জন গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জেলায় কোন দিন কে কোন কেন্দ্রে টিকা নেবেন, তার তালিকা আমাকে পাঠানো হবে। অন্যদিকে একই তথ্য টিকাগ্রহীতার কাছে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হবে। কিন্তু আমি কোনো তালিকা এখনো পাইনি। কেউ খুদে বার্তা পেয়েছে কি না জানি না।’
খুদে বার্তার ব্যাপারে এমআইএসের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, এমআইএস থেকে এই খুদে বার্তা পাঠানো হবে। তবে কখন পাঠানো শুরু হবে, তা তিনি বলেননি।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিনিধি, মহেশখালী]