টিএসপি সারের ১০ নমুনার ৯টিতেই ভেজাল

কমিটির ধারণা, চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে এ সার যশোরে আনার পথে সারে ভেজাল উপাদান যোগ করা হয়েছে।

নকল সন্দেহে বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) যশোর বাফার গুদামের সামনে ১১ দিন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচটি ট্রাকবোঝাই ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সারে ভেজাল পাওয়া গেছে। এই সারের ১০টি নমুনা পরীক্ষা করে বিসিআইসি। তার মধ্যে নয়টি নমুনা সম্পূর্ণ ভেজাল এবং একটি নমুনা ‘ভালো নয়’ বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

কমিটির ধারণা, চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে এ সার যশোরে আনার পথে সারে ভেজাল উপাদান যোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবহন ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিরাপত্তা জামানত টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে ভেজালের বিষয়টি অস্বীকার করে পরিবহনকারী ঠিকাদার মেসার্স সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের মালিক আহসান হাবীব শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এ সার নকল নয়। সার নিয়ে সন্দেহ-সংশয়ের কোনো কারণ নেই। কারখানা যেভাবে সার দিয়েছে, সেভাবে সার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’

টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড বিসিআইসির নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গায় অবস্থিত টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার জন্য মাসিক বরাদ্দের টিএসপি সার যশোর বাফার গুদামে আনা হয়। সেখান থেকে সার বিসিআইসি ডিলারের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি যশোর বাফার গুদামে সার পরিবহন করার জন্য চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটের পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স সৈয়দ এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয় টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড। এর পর থেকে সার পরিবহন করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

যশোর জেলার জন্য বরাদ্দ ৭০ মেট্রিক টন টিএসপি সার ১৭ মার্চ পাঁচটি ট্রাকে করে যশোর বাফার গুদামে আনা হয়। সার পৌঁছানোর পর বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ইনচার্জ) সন্দেহ হওয়ায় তিনি সার খালাস না করে ট্রাকগুলো গুদামের বাইরে রাখার নির্দেশ দেন। পরদিন ১৮ মার্চ বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানান। এর পর থেকে সারবোঝাই ট্রাকগুলো বাফার গুদামের আঙিনায় দাঁড়িয়ে আছে।

এ ঘটনায় টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের উপপ্রধান রসায়নবিদ রেজাউল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন বিসিআইসির উৎপাদন বিভাগের ব্যবস্থাপক শফিকুল কবীর ও বিসিআইসির উপপ্রধান হিসাব রক্ষক নির্মল কুমার দত্ত। তদন্ত কমিটির সদস্যরা যশোরে এসে ১৯-২০ মার্চ তদন্ত করেন। কমিটি চট্টগ্রাম থেকে আসা ট্রাকের কাগজপত্র, ট্রাভেল এজেন্সির কাগজপত্র পরীক্ষা করে। কমিটি সারের ১০টি বস্তা থেকে সারের নমুনা সংগ্রহ করে চট্টগ্রামে টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক গবেষণাগার, যশোরের পরীক্ষাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। গত বৃহস্পতিবার ওই পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় বিসিআইসির এক জরুরি বৈঠক বসে। বৈঠকে পরিবহন ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা এবং তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। গতকাল রোববার এক চিঠিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি ওই সারের ১০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগ.ারে পরীক্ষা করিয়েছে। পরীক্ষায় ৯টি নমুনায় সম্পূর্ণ ভেজালের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় অবশিষ্ট নমুনাটি ভালোর কাছাকাছি, কিন্তু সম্পূর্ণ ভেজালমুক্ত নয় বলে প্রমাণ মিলেছে।

এ ঘটনায় পরিবহন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে আতাউর রহমান জানান, আজই তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টির অধিকতর তদন্তে বিসিআইসির লেবার অ্যান্ড স্টাফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।