টার্মিনালে বাজার, সড়কে জট

সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি ২৪–২৭ ঘণ্টা এবং যাত্রীবাহী বাস ৯-১০ ঘণ্টা পারাপারের অপেক্ষায় থাকে

দৌলতদিয়ায় সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। মঙ্গলবার ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল কলেজের সামনে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দুটি টার্মিনালে যানবাহন রাখা হয় না। একটি টার্মিনালে মাছ ও কাঁচাপণ্যের বাজার বসে। অন্যটিতে জেলার অভ্যন্তরীণ পথে কিছু বাস থাকে।

এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগে পোহাতে হয় গাড়িচালক ও যাত্রীদের। গত মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গোয়ালন্দ ফিড মিল পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন। এর মধ্যে ফেরিঘাট থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারি পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার দুই-তিন সারিতে গাড়ির জট তৈরি হয়েছে। কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি ২৪ থেকে ২৭ ঘণ্টা ধরে আটকে আছে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ৯-১০ ঘণ্টা ধরে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে।

দৌলতদিয়া ঘাটে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা প্রায় ৫০০ যানবাহন। বড় টার্মিনালে বেশ কয়েকটি লোকাল বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিকল্প সড়কের পূর্ব পাশে আরেকটি টার্মিনাল রয়েছে। সেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকেরা সবজি নিয়ে বিক্রি করছেন। এর পাশে বসেছে মাছের বাজার। পুরো টার্মিনালে বাজার বসেছে।

ফেরিঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পেছনে দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের কাছে তিন লাইনের মাঝে আটকে আছে খুলনা থেকে আসা হানিফ পরিবহনের একটি কোচ। বাসটি সোমবার রাত ১২টায় এসে যানজটে আটকা পড়ে।

বাসের যাত্রী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যানজটে আটকে থাকার পর থেকে বাসের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৯ ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে আছি। তখন থেকে বিকল্প উপায়ে পরিবহনের কথা বলছি। চালক ও সুপারভাইজার কোনো কথায় কর্ণপাত করছেন না। পেছনের গাড়ি সামনে চলে যাচ্ছে। অথচ আমরা এগোতেই পারছি না।’

আবদুল খালেক নামের এক যুবক বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকায় আমার একটি চাকরির সাক্ষাৎকার আছে। সময়মতো পৌঁছাতে না পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।’

ফরিদপুর থেকে আসা চট্টগ্রামগামী সুতলিবোঝাই ট্রাকের চালক মতিয়ার বিশ্বাস বলেন, ‘সোমবার ভোর ছয়টা থেকে আটকে আছি। রাতভর লাইনে থেকে মাত্র টার্মিনালের কাছে আসলাম। ২৬ ঘণ্টা ধরে সিরিয়ালে বসে আছি। পাশেই দুটি বড় টার্মিনাল। আমাদের টার্মিনালেও থাকতে দিলে ছিনতাইয়ের ভয় থাকে না। আমরাও বিশ্রাম নিতে পারি।’

টার্মিনাল ব্যবহার না করে মহাসড়কে গাড়ি রেখে যানজট তৈরি করার বিষয়ে সোমবার উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। এ সময় কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দৌলতদিয়া মুক্তি মহিলা সমিতির কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ঘাটে দুটি বড় বড় টার্মিনাল রয়েছে। টার্মিনালে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি রাখা হয় না। অথচ রাত-দিন সড়কে পণ্যবাহী গাড়ির লম্বা লাইন। এসব গাড়ি টার্মিনালে রেখে সিরিয়ালভাবে টিকিট দিলে সড়কে কোনো যানজট হয় না। অথচ কার স্বার্থে টার্মিনাল ফাঁকা রেখে গাড়ি মহাসড়কে লাইন ধরে রাখা হচ্ছে বিষয়টি জানা দরকার।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক জামাল হোসাইন। তিনি বলেন, টার্মিনাল দুটি বিআইডব্লিউটিএ পরিচালনা করে। কী জন্য টার্মিনাল ফাঁকা রাখা হচ্ছে, তারা ভালো বলতে পারবে। গাড়ির সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক পুলিশ।

দৌলতদিয়া ঘাটের টার্মিনালে চলছে বেচাকেনা। গত মঙ্গলবার সকালের ছবি

কেন টার্মিনালে গাড়ি রাখে না, এ ব্যাপারেও তারা বলতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক তারক কুমার পালের মুঠোফোন একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন ধরেননি। ঘাটে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক (টিএসআই) ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা সিরিয়াল অনুযায়ী গাড়ি ফেরিতে ওঠার সুযোগ
করে দিচ্ছি। এ জন্য সিরিয়াল হলেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না।’