টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তির অন্তর্বর্তী জামিন বাতিল করেছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ মাসুদ পারভেজ এ আদেশ দেন।
একই আদালত থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সহিদুর অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন। আজ রায় ঘোষণার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খানের ভাই হলেন সহিদুর। তাঁর বাবা আতাউর রহমান খান ওই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জামিন বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সহিদুর রহমান খান আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর থেকে অন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ার আগপর্যন্ত সহিদুর কারাগারে ছিলেন।
মনিরুল ইসলাম খান বলেন, আজ ফারুক হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। সহিদুর আইনজীবীদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বর্ধিতসহ স্থায়ী জামিন মঞ্জুরের আবেদন করেন। আবেদনে তাঁরা উল্লেখ করেন, সহিদুরের চিকিৎসা চলছে। তাই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
এদিকে মামলার বাদী নিহত ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ আদালতে সহিদুরের অন্তর্বর্তী জামিন বর্ধিত না করার জন্য আবেদন করেন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ার পর সহিদুর মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে শোভাযাত্রা করে শহরে ত্রাসের সৃষ্টি করেছেন। বাদীসহ মামলার সাক্ষী ও বাদীপক্ষের লোকজনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ডে মানুষের মনে ভীতির সৃষ্টি হচ্ছে।
উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে পরে আদালত জামিন বাতিল করে সহিদুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিকে মামলার সাক্ষী পুলিশ পরিদর্শক আবু ওবায়দা আদালতে হাজির হন। কিন্তু আসামিপক্ষ আদালতে জানায়, তাদের পক্ষে জেরা করার জন্য আইনজীবী ঢাকা থেকে আসতে পারেননি। তাই তারা সময় প্রার্থনা করে। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ কলেজপাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
আদালতে এ দুজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান, তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খানের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আত্মগোপনে চলে যান।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে আমানুর রহমান খান, তাঁর অপর তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আমানুর রহমান খান রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর কারাভোগের তিনি জামিন পেয়ে মুক্ত আছেন। তাঁর অপর দুই ভাই আত্মগোপনে রয়েছেন।