টাকা হারানোর ঘটনায় সন্দেহ, ভয়ে পালিয়ে যায় তারা

সংবাদ সম্মেলন করে তিন মাদ্রাসাছাত্রীকে উদ্ধারের কথা জানানো হয়। শুক্রবার বিকেলে জামালপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের ইসলামপুর থেকে নিখোঁজ তিন মাদ্রাসাছাত্রীকে রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা বলছে, মাদ্রাসার পরিচালকের স্ত্রীর ১ হাজার টাকা হারানোর ঘটনায় ওই ছাত্রীদের সন্দেহ করা হচ্ছিল। টাকা ফেরত দিতে তাদের চাপও দেওয়া হয়। ভয়ে ওই ছাত্রীরা গভীর রাতে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়।

শুক্রবার বিকেলে জামালপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (ইসলামপুর সার্কেল) সুমন মিয়া, জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম খান, ইসলামপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সরবরাহ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, উপজেলার গোয়ালেরচর দারুত তাক্কওয়া মহিলা মাদ্রাসার মোহতামিম আসাদুজ্জামানের স্ত্রীর ১ হাজার টাকা সম্প্রতি হারিয়ে যায়। মাদ্রাসার সব শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় শ্রেণির ওই তিন ছাত্রীকে সন্দেহ করেন। টাকা ফেরত দিতে তাদের চাপ প্রয়োগ করা হয়। অন্যরা তাদের নানা কথা বলতে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ওই ছাত্রীরা।

সে মোতাবেক গত রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে মাদ্রাসার একটি কক্ষের জানালা দিয়ে বাইরে বের হয় তারা। হেঁটে ইসলামপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়। তিনজনের কাছে মাত্র ৩৪০ টাকা ছিল। সেই টাকা দিয়ে তারা ট্রেনের টিকিট কাটে। সোমবার ভোরে ট্রেন ছাড়ে। সেটি ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে তিন ছাত্রী নেমে পড়ে। ৯, ১০, ১১ বছর বয়সী এই মেয়েগুলোর কাছে আর কোনো টাকাপয়সা ছিল না।

পুলিশ বলছে, বুধবার ইসলামপুর থানা কার্যালয় এলাকার পুলিশ কল্যাণ মার্কেটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। তাতে ওই তিন ছাত্রীকে হেঁটে ইসলামপুর স্টেশনের দিকে যেতে দেখা যায়। এর সূত্র ধরে জামালপুরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সুমন মিয়ার নেতৃত্বে একটি পুলিশের দল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় যায়।

দলটির সদস্যরা কমলাপুর রেলস্টেশনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। তাতে ওই তিন ছাত্রীকে স্টেশন থেকে বের হতে দেখা যায়। পরে পুলিশ সদস্যরা কমলাপুর স্টেশনের আশপাশের লোকজনকে তিন ছাত্রীর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে রাজা মিয়া নামের এক রিকশাচালক ওই তিন ছাত্রীর হদিস দেন। রাজা মিয়ার বাড়িতেই ছিল তারা। সেখান থেকে তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর শুক্রবার সকালে তাদের ইসলামপুরে ফিরিয়ে আনা হয়।

পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রিকশাচালক রাজা মিয়া ওই ছাত্রীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিন ছাত্রীর মধ্যে দুজন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরিও নিয়েছিল। রিকশাচালকের সহযোগিতায় তারা একটি ঘরও ভাড়া করেছিল।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা ছিল উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি তারা। তিন ছাত্রী নিখোঁজের ঘটনার পর মাদ্রাসাটির বিষয়ে নানা তথ্য আসছে। ফলে মাদ্রাসাটির অর্থের জোগানদাতা, সেখানে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হতো কি না, এসব বিষয়ের তদন্ত চলছে। উদ্ধার হওয়া ছাত্রীদের আদালতের মাধ্যমে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।