টাকা ছিনিয়ে নিতে হত্যার পর পোড়ানো হয় লোকটিকে: পুলিশ

মাগুরা সদরের দারিয়াপুরে পাতা পোড়া ছাইয়ের মাঝে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল মরদেহটি
ফাইল ছবি

মাগুরা সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের মাঝপাড়া এলাকার নির্জন মেহগনিবাগানে ১ মার্চ রাতে জুয়ার আড্ডায় বসেছিলেন ছয়জন। রাত ১০টা থেকে শুরু হয়ে এ আড্ডা চলে রাত ১টা পর্যন্ত। খেলা শেষে জিতে যাওয়া ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় অন্যদের। তখন তাঁর কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে জিআই পাইপ ও লোহার চেইন দিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন বাকিরা। আলামত ধ্বংসের উদ্দেশ্যে পাশে জমে থাকা গাছের পাতা দিয়ে তাঁকে পোড়ানো হয়।

আজ রোববার সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন মাগুরার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জহিরুল ইসলাম। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহত ব্যক্তির নাম মো. এসকেন মোল্লা (৭৩)। তাঁর বাড়ি পাশের ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার হাট গোপালপুরের খুলুল বেড়বাড়ি গ্রামে। অজ্ঞাত হিসেবে মাগুরার কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এসকেন মোল্লা মাগুরা সদর উপজেলার আলমখালী বাজারে গবাদিপশুর ব্যবসা করতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ১ মার্চ সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে দারিয়াপুর গ্রামের আবু তাহের মিয়ার মেহগনিবাগান থেকে আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া একটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়। ওই দিনই সদর থানা–পুলিশের উপপরিদর্শক শ্রীবাস কুণ্ডু বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পাশপাশি তদন্তে নামে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনাস্থল থেকে একটি ভাঙা মুঠোফোন জব্দ করে পুলিশ। ওই মুঠোফোনের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। একই সঙ্গে মুঠোফোনের কললিস্ট ধরে গতকাল শনিবার ভোর রাতে মিনহাজ ওরফে মিরাজ (২৮) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। পুলিশ বলছে, ওই যুবকই ফোন করে এসকেন মোল্লাকে ডেকে এনেছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আলমখালী বাজারে ধানের চাতালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা ওই যুবক মাগুরা সদর উপজেলার ধলহারা কালুপাড়া এলাকার নজরুল মোল্লার ছেলে। তবে তিনি একই উপজেলার আলিধানীতে নানার বাড়িতে থাকতেন। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গতকাল মাগুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মিনহাজ। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার মিনহাজের জবানবন্দি অনুযায়ী, এ ঘটনায় জড়িত দুই আসামি মাগুরা সদর উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের আনসার উদ্দিন বিশ্বাস (৬৫) ও একই উপজেলার সাচানী গ্রামের মো. শহর আলীকে (৬৯) আজ রোববার ভোরে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও দুজন সরাসরি জড়িত আছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

মাগুরার পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নিহত এসকেন মোল্লা আগে থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে জুয়া খেলে আসছিলেন এবং বেশির ভাগ সময় তিনিই জয়ী হতেন। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দিন পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করেন। তিনি আরও বলেন, নিহত ব্যক্তির দুই স্ত্রী। তবে পারিবারিক সম্পর্ক তেমন একটা মজবুত ছিল না বলে মনে হয়েছে। কারণ, নিখোঁজ হওয়ার কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর খোঁজে কোনো থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।