স্বামী মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে সৌদি আরবে যান সুমনা বেগম। এ সময় ছেলে জিসান (৬) ও মেয়ে সুমাইয়াকে (৮) রেখে যান শ্বশুর–শাশুড়ি ও দেবরের জিম্মায়। সেই দেবরই টাকার জন্য অকথ্য নির্যাতন চালান শিশু জিসানের ওপর। সেই নির্যাতনের ভিডিও প্রবাসী সুমনার কাছে পাঠিয়ে দাবি করেন টাকা।
হবিগঞ্জে ছয় বছরের শিশুকে নগ্ন করে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শিশুটির চাচা স্বপন মিয়া গত বৃহস্পতিবার রাতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার চরগাঁও গ্রামের সুফি মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগর এলাকার সুমনা বেগমের। বিয়ের পর তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় এক ছেলে ও এক মেয়ে। এর কিছুদিন পরই সুফি মিয়া মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সন্তানদের কথা চিন্তা করে জীবিকার তাগিদে সুমনা গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে তিন-চার মাস আগে সৌদি আরব যান। যাওয়ার আগে তিনি জিসান ও সুমাইয়াকে দেবর স্বপন মিয়া ও শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে রেখে যান। কিন্তু স্বপন মিয়া কিছুদিন পরপরই তাঁর ভাবিকে টাকার জন্য তাগিদ দিতে থাকেন। সর্বশেষ সপ্তাহখানেক আগে জিসানকে নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ পাঠান।
ভিডিওতে দেখা যায়, শিশু জিসানকে নগ্ন করে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারছে এক ব্যক্তি। পাশাপাশি ওই ব্যক্তি শিশুটির দুই পা ওপরে তুলে, মাথা নিচে ঝুলিয়ে আচড়ে মারার ভয় দেখাচ্ছে। এ সময় শিশুটি ভয়ে মা মা করে কাঁদছিল। নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ১ নভেম্বর দেশে আসেন সুমনা। তিনি পুলিশের কাছে ঘটনার বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর গত বুধবার ভোররাতে স্বপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সুমনা বেগম বলেন, বিদেশে যাওয়ার আগে বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য দেবরকে ২০ হাজার টাকা ও একটি রিকশা কিনে দিয়ে যান। কিন্তু দুই মাস যেতে না–যেতেই স্বপন মিয়া আরও টাকা দাবি করেন। টাকার জন্য জিসানকে অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিও করে পাঠান।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লা বলেন, নির্যাতনকারী স্বপন মিয়াকে বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রাতেই তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।