কক্সবাজারের খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের প্রতিটিতে আশ্রয় নেবে ৩২টি করে পরিবার। জেলে, শুঁটকিশ্রমিক, রিকশা, ভ্যানচালক, ভিক্ষুকসহ অনেকে এখন এ প্রকল্পের কল্যাণে ফ্ল্যাটের মালিক। উপকূলের ঝুপড়িঘর থেকে তাঁরা ফ্ল্যাটবাড়িতে গিয়ে কী করছেন? পথের মানুষগুলোর দিনকাল এখন কেমন কাটছে, জানার কৌতূহল অনেকের। সরেজমিনে কথা হয় ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত এসব দরিদ্র মানুষের সঙ্গে।
কক্সবাজার উপকূলের নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লিতে ছোট–বড় সবার পরিচিত মুখ নুর বানু (৬২)। ৩০ বছর ধরে তিনি এলাকার এবাড়ি-ওবাড়ি ও আশপাশের শুঁটকিমহালে (কারখানায়) ভিক্ষা করে সংসার চালিয়েছেন। থাকতেন শুঁটকিমহালের পাশের গ্রাম ফদনারডেইলে। বৃষ্টি হলেই নুর বানুর বাঁশের বেড়া ও পলিথিনের ছাউনিযুক্ত ছোট্ট ঝুপড়িঘরটি ডুবে যেত। তখন চার মেয়েকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করতে হতো নুর বানুকে।
এক মাসের বেশি সময় ধরে এলাকা থেকে উধাও নুর বানু। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন জানালেন, তিনি (নুর বানু) এখন ভিন জগতের মানুষ। তাঁর কপাল খুলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ায় তিনি এখন ২০ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক।
স্থানীয় লোকজন যে ‘ভিন জগৎ’-এর কথা জানালেন, সেটি খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প। কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে এ প্রকল্পের আওতায় তৈরি হচ্ছে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবন। যেখানে ঠাঁই হবে ৪ হাজার ৪০৯ পরিবারের অন্তত ২০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের। গত ২৩ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রথম ধাপে তৈরি ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় অন্তত ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের হাতে ফ্ল্যাটবাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয়। চাবিতে লেখা আছে, ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’।
খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন। এখানে নির্মাণাধীন ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের প্রতিটিতে ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ইউনিট (ফ্ল্যাট) থাকছে। সেখানে আশ্রয় নেবে ৩২টি করে পরিবার।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ২০ লাখ টাকা দামের প্রতিটি ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হতে একেকটি পরিবারের খরচ হবে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা। ফ্ল্যাটের মালিকানার দলিল যেদিন হস্তান্তর হবে, সেদিন ১ হাজার ১ টাকা আদায় করা হবে। দলিল তৈরির কাজ চলছে। এত অল্প টাকায় ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হওয়ার নজির বিশ্বের কোথাও নেই। এটি প্রধানমন্ত্রীর দয়া ও আন্তরিকতার বলেই সম্ভব হয়েছে।
নুর বানুর মতো উপকূলের জেলে, শুঁটকিশ্রমিক, রিকশা, ভ্যানচালকসহ অনেকে এখন এ প্রকল্পের কল্যাণে ফ্ল্যাটের মালিক। উপকূলের ঝুপড়িঘর থেকে তাঁরা ফ্ল্যাটবাড়িতে গিয়ে কী করছেন? পথের মানুষগুলোর দিনকাল এখন কেমন কাটছে, তা জানার কৌতূহল অনেকের। সরেজমিনে কথা হয় ফ্ল্যাটে স্থানান্তরিত এসব খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের সঙ্গে।
১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার ভেতরে দেখা গেল, খোলা মাঠে খেলছে ছেলেমেয়েরা। প্রতিটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে কেনাকাটার দোকানপাট। সেখানে আড্ডা চলছে নারী-পুরুষের। দূরে তৈরি হয়েছে বড় একটি দিঘি, তার পাশে স্কুল ও পণ্য বেচাকেনার মার্কেট। তবে এখনো তা চালু হয়নি।
ভবনের পাশে একটি দোকানের সামনে পাওয়া গেল সেই নুর বানুকে। তাঁর হাতে লাঠি। লাঠির ওপর ভর দিয়ে তিনি হাঁটাচলা করেন। এই প্রতিবেদককে দেখতেই সামনে দাঁড়ালেন। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘কিছু সাহায্য দাও বাবা, শরীর ভালো না।’
‘এখানেও আপনি ভিক্ষা করছেন? আপনি না ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক?’ প্রশ্নে নুর বানু বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা অনেকে কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের উপকূলের ঝুপড়িঘর থেকে তুলে এনে ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক বানিয়েছেন। এ জন্য প্রতিদিন নামাজে তাঁর (প্রধানমন্ত্রীর) জন্য দোয়া করি, তাঁর সুস্থ ও দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করি। এখন ফ্ল্যাটবাড়িতে আমরা আরামে ঘুমাতে পারছি, কিন্তু ঠিকমতো খেতে পারছি না। খাবারের জন্য ভিক্ষা ছাড়া উপায় নাই। ফদনারডেইলে থাকতে ভিক্ষা করলে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পাওয়া যেত। এখানে কেউ ভিক্ষা দেয় না। দুই মেয়ে নিয়ে বিপদে আছি।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের উত্তর পাশে পাঁচতলা ভবন ‘শনখালী’। এই ভবনের চারতলায় ৪০৭ নম্বর ফ্ল্যাটটি নুর বানুর। সঙ্গে থাকে দুই কিশোরী মেয়ে আয়েশা (১৫) ও রাশেদা (১২)। ওদের ফ্ল্যাটবাড়িতে রেখে প্রতিদিন ভিক্ষা করতে বেরোন নুর বানু।
পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করে নুর বানু বলেন, ১০ বছর আগে চার মেয়েকে ঘরে রেখে ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হামলায় নিহত হন স্বামী মোজাহের মিয়া। এরপর সংসারের হাল ধরেন তিনি। চার মেয়েকে মানুষ করতে নেমে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে। মানুষের কাছে গেলে তাঁকে কেউ না করেন না। ইতিমধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন মৃত্যুর আগে অপর দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে যেতে পারলে শান্তি পাবেন তিনি।
কোরাল ভবনের নিচতলায় দেখা গেল ৫০ থেকে ৬০ জন শ্রমজীবী নারীর জটলা। তাঁরা কক্সবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র শাহিন আক্তারকে ঘিরে ধরে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরছেন।
হুসনা আরা (৪৮) নামের একজন বলেন, ‘ঘরে ঘরে খাবারের সংকট চলছে। সাহায্য দেন, নইলে না খেয়ে মারা যাব।’ মঞ্জুরানী দে (৫০) নামের আরেক শ্রমজীবী নারী বলেন, ‘গায়ে জ্বর। কাজ করতে পারছি না। স্বামীও অসুস্থ। ওষুধ কেনার টাকা দাও।’
কামাল উদ্দিন (৮০) নামের এক শুঁটকিশ্রমিক বলেন, ‘২০ লাখ টাকা ফ্ল্যাটবাড়ি বিনা মূল্যে আমাদের দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য আমরা ধন্য। এখন জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ ও ত্রাণ চাই। কারও মৃত্যু হলে দাফনের জন্য কবরস্থান, নামাজের জন্য মসজিদ, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা চাই।’
আরও কয়েকজন বলেন, করোনাকালের ছয় মাসে শুঁটকিমহালগুলো বন্ধ থাকায় তাঁদের আয়রোজগার বন্ধ। উপকূলের বসতি ছেড়ে খুরুশকুল আশ্রয়শিবিরে আছেন ১ মাস ৩ দিন। কিন্তু কেউ কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি। তাঁরা সহযোগিতা চান বলে জানান।
কাউন্সিলর শাহিন আক্তার তাঁদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। অসুস্থ ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে বাঁকখালী ভবনের চতুর্থ তলার ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন ছবিলা বেগম (৪০)। সঙ্গে এক মেয়ে ও তিন ছেলে। আড়াই বছর আগে মারা গেছেন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ ফোরকান। ছবিলা বলেন, ‘আগে কুতুবদিয়া পাড়ার ঝুপড়িঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। ছিল না গ্যাসের চুল্লি, পানি সরবরাহের পাইপলাইন। শেখ হাসিনা ফ্ল্যাটবাড়ির সঙ্গে সবকিছু দিয়েছেন। আগে শুঁটকিপল্লিতে রোদে পুড়ে মেয়েরা কালো হয়ে যেত। এখন পাকা ভবনে ফ্যানের বাতাসে আরামে থাকতে পেরে মেয়েরা সুন্দর হচ্ছে। কিন্তু আয়রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে মেয়েদের আবার রোদে পুড়তে হবে।’
গন্ধরাজ ভবনের ৪০৭ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন হামিদা বেগম (৫০)। ঘরে আছেন তাঁর অসুস্থ স্বামী দৌলত খান এবং তাঁদের দুই কিশোরী মেয়ে। হামিদা বেগম বলেন, পাইপলাইনে যে পানি সরবরাহ হয়, তা লবণাক্ত, খাওয়ার অযোগ্য। খাবার পানির জন্য দূরের গ্রামে মেয়েদের পাঠানো নিরাপদ নয়। কারণ, এ প্রকল্পের বাইরের সীমানাপ্রাচীর নেই। সন্ধ্যার পর বখাটের উৎপাত লেগে থাকে।
কোরাল ভবনের দ্বিতীয় তলার ২০৭ নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন রুনা আক্তার (২৫)। স্বামী আবুল কাশেম মাছ ধরতে ট্রলার নিয়ে সাগরে গেছেন। ঘরে দুই ছেলে, এক মেয়ে। রুনা আক্তার বলেন, ‘বিনা মূল্যে ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হব, কল্পনাও করিনি। শেখ হাসিনা এককথার মানুষ। যেমন ওয়াদা, তেমন কাজ। আমরা তাঁর কাজে কৃতজ্ঞ।’
২০১৮ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। রানওয়েসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির জন্য অধিগ্রহণ করতে হয়েছে বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশ লাগোয়া কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নাজিরারটেক উপকূলের বিপুল পরিমাণ সরকারি খাসজমি। সেখানে এক যুগের বেশি সময় ধরে বসবাস করছিল চার হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, পেকুয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে বিমানবন্দরের পাশে সমুদ্র উপকূলে আশ্রয় নিয়েছিলেন এসব গৃহহীন মানুষ। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে এসে জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, মাথা গোঁজার বিকল্প ঠাঁই না করে সরকারি খাসজমি থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না।
এরপর অধিগ্রহণ করা সরকারি খাসজমিতে বসবাসকারী ৪ হাজার ৪০৯ পরিবারের অন্তত ২০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসনের জন্য খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের জন্য খুরুশকুলে অধিগ্রহণ করা হয় ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমি। এ প্রকল্পে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবন ছাড়াও ১০ তলার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ভবন হচ্ছে। ভবনটির নামকরণ হয়েছে ‘শেখ হাসিনা টাওয়ার’। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এ পর্যন্ত পাঁচতলাবিশিষ্ট ১৯টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। আরও একটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। এখন এসব ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছে ৬০০টি পরিবার। পরিবারগুলো অধিকাংশ শুঁটকিশ্রমিক, জেলে, ভ্রাম্যমাণ শুঁটকি বিক্রেতা, রিকশা ও ভ্যানচালক, যাঁদের দিন এনে দিন খেতে হয়। কয়েকটি পরিবার আছে ভিক্ষা করে চলে।
প্রকল্পের একটি বিশেষ ব্যাপার হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ২০টি ভবনের নান্দনিক নামও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। নামগুলো হচ্ছে দোলনচাঁপা, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালি, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, ইনানী এবং সাম্পান।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা পরিবারগুলোর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, বিনোদনের পার্ক ইত্যাদি। উপকারভোগীদের অধিকাংশের পেশা ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ এবং উপকূলে বিভিন্ন মহালে কাঁচা মাছকে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদন। প্রকল্পে আশ্রয় পাওয়া এসব মৎস্যজীবীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং শুঁটকি উৎপাদনের জন্য প্রকল্প এলাকায় তৈরি হবে আধুনিক শুঁটকিপল্লি।
কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ সেতু ও সংযোগ সড়ক। আশ্রয় গ্রহণকারীদের জীবনমান উন্নয়নে সমবায় সমিতি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সদস্যদের হাঁস-মুরগি, পোলট্রি, সেলাইসহ নানা কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ফ্ল্যাট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির মাধ্যমে উপকারভোগীদের জীবন–জীবিকা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, ভবন ও রাস্তাসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে কক্সবাজার ফিরে আসার সময় এই প্রতিবেদকের সামনে এসে দাঁড়ান কাউসার বেগম (৪৫)। তিনি থাকেন সাম্পান ভবনে। এ ভবনের ৪০৮ নম্বর ফ্ল্যাটটি তাঁর নামে বরাদ্দ। তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘শেখ হাসিনা হঁঅত্যে আইয়ের?’ (শেখ হাসিনা কখন আসবেন?)
মনখালী ভবনের ৪০৩ নম্বর ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দা ফরিদা ইয়াসমিন (৫০) বলেন, ‘প্রকল্প উদ্বোধনের সময় (২৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের (জলবায়ু উদ্বাস্তুদের) দেখতে আসবেন, শুঁটকি মাছ দিয়ে ভাত খাবেন। আমরা শুঁটকি নিয়ে তাঁর অপেক্ষায় অছি।’
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারের মানুষের প্রতি শেখ হাসিনার টান অনেক। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তিনি কক্সবাজার সফরে আসবেন। তখন খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের দেখতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।’
আমজাদ হোসেন (৫৫) নামের এক জেলে বলেন, ‘১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মা–বাবা, ভাইবোনসহ পরিবারের সাতজনকে হারিয়ে কুতুবদিয়া থেকে কক্সবাজারের এই উপকূলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছিলাম। এখন খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমার মতো পথের মানুষগুলো বিনা মূল্যে ফ্ল্যাটবাড়ির মালিক হচ্ছেন, এ আনন্দ লুকিয়ে রাখি কী করে?’