মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামের সেতুটি প্রায় তিন বছর আগে বন্যায় ধসে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে আশপাশের পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। পরে সেতুটির পাশেই তারা তৈরি করে বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে তারা এখন পারাপার হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হরিরামপুর-ঝিটকা সড়কের দিয়াবাড়ি বাজারের পাশে বাবুপুর গ্রামে প্রবেশের সড়কের শুরুতেই সেতুটি অবস্থিত। সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি ধসে গেছে। সেতুর পাশেই দু-তিনটি বাঁশ দিয়ে একটি সরু সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। সাঁকোটি সরু হওয়ায় একজন করে পার হতে হয়। এতে এক পাশে কেউ সাঁকোতে উঠলে অপর পাশের লোকদের অপেক্ষা করতে হয়। তবে সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে লোকজন পারাপার হলেও বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান নিয়ে কেউ চলাচল করতে পারছে না।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির আওতায় ২৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটির দুই পাশের সংযোগ সড়ক ধসে যায়। তবে এখনো মেরামত করা হয়নি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুটির নির্মাণ পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এ কারণে ছোটখাটো বন্যাতেই এর সংযোগ সড়ক ধসে যায়। স্থানীয় লোকজন কয়েকবার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কোনো লাভ হয়নি।
মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছিলেন পাশের খোদানওধা গ্রামের জহুর আলী। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, বাবুপুর, খোদানওধা, কচুয়া, ইজদিয়া ও জামালপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এই সেতু দিয়ে পারাপার হতো। সেতুটি ধসে যাওয়ার পর থেকে এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
বাবুপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, এলাকাবাসীর উদ্যোগে দু-তিনটি বাঁশ দিয়ে একটি সরু সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। এই সাঁকো দিয়ে কোনো রকমে লোকজন পার হতে পারলেও একটি সাইকেলও পারাপার করা যায় না।
এদিকে কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনেও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সেসব গ্রামের বাসিন্দা। খোদানওধা গ্রামের কৃষক শামসুদ্দিন খান বলেন, আশপাশের গ্রামগুলোতে ধান, শর্ষে, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। এসব ফসল হাটবাজারে বিক্রি করেন কৃষকেরা। তবে সেতু ধসে যাওয়ার পর থেকে এসব ফসল হাটবাজারে নিতে তাঁদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চালা ইউপির চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অন্তত পাঁচটি গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে সেতু নির্মাণ প্রয়োজন। এলাকাবাসীও সেখানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে পিআইও মো. মানিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ওই স্থানে নতুন করে আরেকটি সেতু নির্মাণে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের অনুমোদন হলে ও অর্থ বরাদ্দ পেলে সেখানে পুনরায় সেতু নির্মাণ করা হবে।