ঝালকাঠিতে সুলভে পণ্য কিনতে মানুষের লাইন, ফিরতে হচ্ছে শূন্য হাতে

ঝালকাঠিতে ওএমএসের খাদ্যপণ্য কিনতে মানুষের ভিড়। মঙ্গলবার সকালে শহরের আড়দ্দাপট্টি এলাকায়।
প্রথম আলো

ঝালকাঠি পৌর শহরে ন্যায্যমূল্যে চাল কিনতে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যান ফরিদা ইয়াসমিন। পৌর শহর থেকে ছয় মাইল দূরের গ্রাম তারুলী থেকে সকাল সাতটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েও চাল পাননি। চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষের ভিড় ও ডিলারের বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে ফরিদার মতো অনেকেই চাল-আটা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

ঝালকাঠিতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে প্রতিদিন খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল, আটা এবং টিসিবির খাদ্যপণ্য কিনতে কম আয়ের মানুষের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষের ভিড়ের কারণে পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ অনেক ক্রেতার। তাঁদের দাবি, বরাদ্দ ও ডিলারের সংখ্যা বাড়ালে দুর্দশা কমবে দারিদ্র মানুষের।

ঝালকাঠি জেলা খাদ্য অফিস ও বরিশাল টিসিবির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে প্রতিদিন প্রতি ডিলারের জন্য ৫০০ কেজি চাল ও ৫০০ কেজি আটা বরাদ্দ থাকে। সপ্তাহের ৬ দিন ওএমএসের দোকানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল ও ১৮ টাকা কেজিতে খোলা আটা বিক্রি করা হয়। ঝালকাঠিতে ১০ জন ডিলারের মাধ্যমে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি করা হয়। এসব কেন্দ্র থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা নিতে পারেন। ৫ কেজি হারে ১ হাজার কেজি চাল-আটা ২০০ মানুষ পেতে পারেন। কিন্তু প্রতিটি ডিলারের পয়েন্ট লাইনে থাকে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের ভিড়। কয়েক দিন ধরে ভিড় বেড়েছে। আগে বিক্রি বিকেল পর্যন্ত চলত। এখন দুপুরের মধ্যেই পণ্য শেষ হয়ে যায়।

এদিকে ঝালকাঠিতে টিসিবির ৩৫ ডিলার আছেন। পণ্য স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন একজন ডিলার খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন। খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল ১০০ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা ও চিনি ৫৫ টাকা। টিসিবির ডিলার পয়েন্টেও বেলা বাড়তেই ভিড় বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ খাদ্যপণ্য না পেয়ে ফিরে যান বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ঝালকাঠি শহরের ফরিয়া পট্টি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য কিনতে লম্বা লাইন। এ সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামলেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকেন শতাধিক নারী-পুরুষ। লাইন থেকে সরে গেলে পণ্য না পেয়েই ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। একই চিত্র শহরের কাঠপট্টি এলাকায়।

কিস্তিকাঠি আবাসন এলাকার খাদিজা বেগমের স্বামী বাসচালকের সহকারী। সরকারি বিধিনিষেধে বাস চলাচল বন্ধ বলে আয়ও বন্ধ। তিনি নিজে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় আপাতত কাজে যেতে নিষেধ করেছেন বাসার লোকজন। এ অবস্থায় একটু কম দামে খাদ্যদ্রব্য কিনতে তিনি শহরের আড়দ্দার পট্টি এলাকার ডিলারের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। খাদিজা বেগম বলেন, ‘ঘরে খাওয়ার লোক পাঁচজন। চাউল নাই এক কেজিও। পাশের বাড়ি দিয়া টাহা ধার কইরা চাউল কেনতে আইছি। মাইনষের যে ভিড়, চাউল পাই কি না, সন্দেহ আছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্যবিত্ত ঘরের এক নারী বলেন, তাঁর স্বামী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। দীর্ঘদিন বেতন বন্ধ। ছেলেমেয়ে নিয়ে অসুবিধার মধ্যে আছেন। তাই কম দামে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

ওএমএস ডিলার লাভলু মীরবহর বলেন, বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী চাল-আটা সরবরাহ করতে ডিলারদের হিমশিম খেতে হয়। লাইনে দাঁড়ানো সব মানুষকে চাল দিতে না পেরে তাঁদেরও খারাপ লাগে।

জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন বলেন, লকডাউনে মানুষের কাজ না থাকায় চাল কেনার জন্য ওএমএসের ডিলারদের ওপর চাপ বেড়েছে। তবে আপতত বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে জেলায় ২২০ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এগুলো শিগগিরই বিতরণ শুরু হলে কিছুটা হলেও ওএমএসের ওপর চাপ কমবে। এ ছাড়া ওএমএস ও টিসিবির ডিলারদের মাধ্যমে আরও খাদ্যপণ্য বিক্রির জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হবে।