ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ঝালকাঠিতে নদীর পানি বেড়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝালকাঠি জেলা শহরসহ রাজাপুর, নলছিটি উপজেলার ১৫টি স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলায় সুগন্ধা, বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেড়েছে। গতকাল সোমবার রাতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝালকাঠি শহরের কলাবাগান, জেলেপাড়া, কলেজ খেয়াঘাট, পশ্চিম ঝালকাঠি, কিফাইতনগর, সদরের দেউরি, দিয়াকুল; নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদী–তীরবর্তী ষাটপাকিয়া ও লঞ্চঘাট এলাকা, রাজাপুরের বিষখালী নদী–তীরবর্তী নাপিতেরহাট, বাদুরতলা, পালট, বড়ইয়া, মানিক সুন্দর, উত্তমপুর গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। কাঁঠালিয়ায় বিষখালী নদীতে বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীতীরের ১৫ গ্রামের হাজারো মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও আম্পানে জেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা কাঁঠালিয়া। বাঁধ না থাকায় প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসে ফসল ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সিডরে এ উপজেলায় ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ঘূর্ণিঝড় আইলা ও আম্পান জেলায় আঘাত আনে। ওই দুটি ঘূর্ণিঝড়ের সময় কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিষখালী নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের জাল ও নৌকা ভেসে যায়।
ইয়াসের প্রভাবে বিষখালী নদীর বেড়ে যাওয়া জোয়ারের নোনা পানিতে আমুয়া, হেতালবুনিয়া, মশাবুনিয়া, চিংড়াখালী, জয়খালী, কাঁঠালিয়া সদর, কচুয়া, শৌলজালিয়া, রঘুয়ার চর, রঘুয়ারদড়ি চর, তালগাছিয়া, আওরাবুনিয়া, জাঙ্গালিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন এবং জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারিভাবে জেলায় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও ২০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৪৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৫০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। জেলায় ৩৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্ট, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যবিভাগসহ জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কর্মকর্তা এবং মাঠপর্যায়ের আনসার-ভিডিপি সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।