জয়পুরহাটে গতকাল সোমবার এক দিনে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জয়পুরহাটে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন শনাক্ত হওয়া ২৩ জনের করোনাভাইরাসের ফল গতকাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসেছে। জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন সেলিম মিঞা আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, জয়পুরহাটের করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা প্রথমে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ল্যাব স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ নমুনা আইইডিসিআর ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা হয়। গতকাল রাতে আইইডিসিআর ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল থেকে নমুনা পরীক্ষার ফল জয়পুরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আইইডিসিআরের পাঠানো নমুনার ফলে ৮ জন ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ১৫ জনের পজিটিভ এসেছে। নতুন ২৩ জন শনাক্তের মধ্যে সদর উপজেলার ৩ জন, পাঁচবিবি উপজেলায় ৫ জন ও কালাই উপজেলায় ১৫ জন। গতকাল রাতে ও আজ আক্রান্তদের আইসোলেশনে নেওয়া হচ্ছে। নতুন শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা কমিয়ে আনতে জয়পুরহাট জেলাজুড়ে ভ্রাম্যমাণ বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের দ্রুত আলাদা করা হচ্ছে। প্রথমে কালাই উপজেলা থেকে ভ্রাম্যমাণ বুথের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল। কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিক আহমেদ এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের প্রস্তাব দেন। স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরুণ চিকিৎসক আশিক আহমেদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এ পদ্ধতিতে তাঁকে নমুনা সংগ্রহে তাঁরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছেন। একই পদ্ধতিতে পুরো জেলায় নমুনা সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
তরুণ এই চিকিৎসকের উদ্যোগ ইতিমধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষায় ‘কালাই মডেল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ৪ এপ্রিল প্রথম আলোর প্রথম পাতায় তরুণ চিকিৎসকের উদ্যোগ কোভিড পরীক্ষায় ‘কালাই মডেল’ শিরোনামে একটি ইতিবাচক প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কোভিড পরীক্ষায় কালাই মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন সেলিম মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, জয়পুরহাটে এক দিনে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এক দিনে আগে কখনো এত সংখ্যক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়নি। এক দিনে এটি করোনা শনাক্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত দুই ব্যক্তিসহ চারজন সুস্থ হয়ে গোপীনাথপুর আইসোলেশন থেকে বাড়ি ফিরেছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জফেরত থাকলেও তাঁদের বেশির ভাগই উপসর্গবিহীন। কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমেও অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের গতকাল রাত থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নেওয়ার কাজ অব্যহত রয়েছে।