ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে উঁচুসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। সেই রাস্তাও প্লাবিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর শান্তিরহাট এলাকায়
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে উঁচুসড়কে আশ্রয় নিয়েছে। সেই রাস্তাও প্লাবিত হচ্ছে।   মঙ্গলবার বিকেলে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর শান্তিরহাট এলাকায়

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস

জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ভোলায় ৮৫ হাজার পরিবার প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলায় জোয়ারের উচ্চতা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে ২৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ৮৫ হাজার পরিবার জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক গবাদিপশু।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মেঘনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৯৫ মিটার, যা বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে পাউবো-১-এর বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া মাঝিরহাট এলাকায়

তবে পাউবো-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, চরফ্যাশন, লালমোহন, তজুমদ্দিন ও মনপুরা উপজেলায় জোয়ারের উচ্চতা আরও বেশি ছিল। এখানে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৬টি পয়েন্টে বাঁধ ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে বাঁধ কোথাও ভেঙে যায়নি। দ্রুত সংস্কার হচ্ছে।

চরফ্যাশন উপজেলার সর্বদক্ষিণে ঢালচর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের চর নিজাম ও ঢালচরের প্রায় ৫ হাজার পরিবার মঙ্গলবার সকালের দিকে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নের ঢালচরের বাসিন্দা মো. মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, তাঁর ২টি গরু ও ২৫টি ভেড়া ভেসে গেছে।

৬ নম্বর ওয়ার্ড (আদর্শপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা মনির ব্যাপারী, আ. রহিম ফরাজী, কাওসার হোসেন, ফখরুল মুন্সি, জাহাঙ্গীর মাতব্বর, মোস্তফা কমান্ডার, সেলিম গাড়ি, শাহাদাত হোসেন, এলাহী মেম্বার আ. সালাম, মো. সিদ্দিকুর রহমান রাঢ়িসহ ৩৫ জনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে। ভিডিও কলে দেখা যায়, ভিটা প্লাবিত হয়ে ঘর পড়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের মাছঘাট-বসত ঘর গুচ্ছগ্রাম প্লাবিত। ফসলি খেতের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা। মঙ্গলবার বিকালে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া মাঝিরহাট এলাকায়

ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আ. সালাম হাওলাদার বলেন, সকালের জোয়ারে ২৫টি ঘর সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। সব পরিবারের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদিপশুও ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া যায়নি। চরকুকরী মুকরী ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবুল হাসেম মহাজন বলেন, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে হাজিপুর ও চরপাতিলার ৩ শতাধিক কাঁচা ঘর ভেসে গেছে। সব পুকুর ও খেতের ফসল ডুবে গেছে। গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনো পাওয়া যায়নি।

ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, রাতের জোয়ারে পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই মানুষকে নিরাপদে নেওয়ার নির্দেশ আছে। কিন্তু মানুষ তাদের গবাদিপশু, ঘরবসতি রেখে যেতে চাচ্ছে না।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া মাঝিরহাট এলাকায়

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ভোলা সদর উপজেলার ৮৫ হাজার পরিবার প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে প্লাবিত ৩ হাজার পরিবার, পূর্ব ইলিশার ১ হাজার, পশ্চিম ইলিশার ১ হাজার, কাচিয়া ইউনিয়নের ৪ হাজার, ধনিয়া ইউনিয়নের ২ হাজার, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ২ হাজার, ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ২ হাজার, শিবপুরের ১ হাজার, দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের ৩ হাজার, মদনপুর ইউনিয়নের ৫ হাজার, হাজীপুরের ১ হাজার, চরপাতা ইউনিয়নের ৫০০, সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৫০০, ভবানীপুরে ইউনিয়নের ৫০০, তজুমদ্দিন ইউনিয়নের মলংচড়া ইউনিয়নের ৪ হাজার, সোনাপুরের ৪ হাজার, চাঁদপুরের ২ হাজার, লালমোহন উপজেলার বদরপুরের ৫০০, লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৫০০, পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৩ হাজার, চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের ৫ হাজার, কুকরী মুকরী ইউনিয়নের ৪ হাজার, মুজিবনগরের ৩ হাজার, মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের ৪ হাজার, হাজীপুরের ২ হাজার, দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ২ হাজার এবং উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ১ হাজার পরিবার প্লাবিত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের মাছঘাট-বসত ঘর গুচ্ছগ্রাম প্লাবিত। ফসলি খেতের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা। মঙ্গলবার বিকালে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া মাঝিরহাট এলাকায়

দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া মাঝিরহাট, সদর উপজেলার শিবপুর, ধনিয়া নাছিরমাঝি এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় প্লাবিত এসব কাঁচা ঘরের মাটির ভিটা ধুয়ে গেছে। খেতের ফসল ডুবে গেছে। লোকজন ভিজে ভিজে নৌকায় চড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে সড়কে, নাইলে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। অনেক এলাকার সড়কের ওপর পানি উঠেছে। অনেক ঘর কাত হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার নিন্মাঞ্চল ও চরাঞ্চল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে ভোলার সদর উপজেলার শিবপুর শান্তিরহাট এলাকায়

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘জোয়ারে ঢালচর, কুকরী মুকরী, মুজিবনগরের বেশ কিছু চর প্লাবিত হয়েছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির তালিকা আমরা করিনি। এসব চরের মানুষকে নিরাপদে আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৫ শতাধিক মানুষকে ট্রলারে করে নিরাপদে আনা হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন উপজেলার চরকুকরী মুকরী ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে

ভোলা জেলা প্রশাসক তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী বলেন, যাঁরা বাঁধের বাইরে এবং চরাঞ্চলে আছেন, তাঁদের নিরাপদে আনার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুকনা খাবারসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য সব ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে তারা কষ্ট না পায়।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলার দক্ষিণাঞ্চলে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্নাঞ্চল ও লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন উপজেলার চরকুকরী মুকরী ইউনিয়নের হাজিপুর গ্রামে