আশাশুনির প্রতাপনগর

জোয়ারে বাঁধে, ভাটায় ঘরে

দিনে দুবার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে এ ইউনিয়নের বড় অংশ। ১৬ মাসেও ভাঙা বাঁধ মেরামত হয়নি।

খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রাম। উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে ছুটছেন এক নারী। গত বুধবার দুপুরে সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

খোলপেটুয়া নদীতে জোয়ার এলেই ঘর থেকে বের হয়ে বাঁধে ছোটেন নছিমন বেগম। আবার ভাটায় পানি নামলে ঘরে ফেরেন। দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে এভাবে ভাসতে হয় তাঁকে। সাতক্ষীরার আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের বাসিন্দা নছিমন বিবি বলেন, ‘গত সাড়ে ১৬ মাস ধরে আমাগো জীবন পানিতে বাঁধা। গেরামের সব নোকজন চলে গেছে প্রায়। আমাগো মতো দু–একজন কখনো বাঁধে আবার কখনো পানির মধ্যে কোনো রকমে বেঁচে নইছি। গেরাম থেকে ৩৫ ঘর মানুষ আগেই চলে গেছে।’

আশাশুনি উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন প্রতাপনগর। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ ইউনিয়নের মানুষ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগেই আবার আঘাত হানে। ভেঙে যাওয়া বাঁধের কারণে ১৬ মাসের বেশি সময় ধরে এ ইউনিয়নের মানুষের জীবন বাঁধা পড়েছে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার-ভাটায়। দৈনন্দিন কাজ চলে জোয়ার-ভাটা ঘিরে। দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে এ ইউনিয়নের বড় অংশ।

২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানে সাতক্ষীরায়। ভেঙে যায় শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ। পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বন্যতলা এলাকার বেড়িবাঁধ ছাড়া ভেঙে যাওয়া অন্য বাঁধ সংস্কার করে লোকালয় পানি ঢোকা বন্ধ করা গেছে। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কয়েকবার পানি আটকানোর চেষ্টা করলেও গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভাঙন বেড়ে দুর্ভোগ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

সরেজমিনে গত বুধবার প্রতাপনগর ইউনিয়নে দেখা যায়, বেলা আড়াইটার দিকে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ার শুরু হয়। বন্যতলার ভাঙন দিয়ে হুহু করে জোয়ারের পানি ঢুকছে কোনো বাধা ছাড়াই। ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়া প্রতাপনগর, মান্দারবাড়িয়া, বন্যতলা, কল্যাণপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের যত দূর দেখা যায় পানি আর পানি। কাঁচা ঘরবাড়ি অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। আধাপাকা বাড়িগুলোও দেয়াল খসে পড়েছে। ছাউনি নেই। এসব গ্রামের মানুষ চলে গেছে অন্যত্র।

প্রতাপনগর গ্রামে কথা হয় বৃদ্ধা আছিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলে, বউসহ তাঁদের বাচ্চা চলে গেছে অন্যত্র। তিনি ভাঙা ঘরে মাচান করে অবস্থান করছেন। ভাটার সময় নিচে নামেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে কাটছে জীবন।

কল্যাণপুর গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, চারদিকে পানি ছাড়া কিছু নেই। কাজ নেই। সবাই বেকার। বাধ্য হয়ে মানুষ গ্রাম ছাড়ছে। তিনিও চিন্তা করছেন শহরে দিকে চলে যাবেন।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তিনি নিজে কয়েকবার বন্যতলা এলাকার ভাঙনকবলিত বাঁধ মেরামত করার চেষ্টা করে সফল হননি। পাউবোর কর্মকর্তাদের আম্পানের আগে একাধিকবার বললেও তাঁরা কর্ণপাত করেনি। ফলে এই বাঁধ ভেঙে গেছে। তাঁদের মেরামতের তাগিদও নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসে বাঁধের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা চেষ্টা করছে।