নেত্রকোনা-মদন সড়কের বয়রাহালা নদীর ওপর বেইলি সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। যেকোনো সময় সেতু ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও গাড়িচালকেরা। তবু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা, নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা-মদন ২৫ কিলোমিটার সড়কে দুটি বেইলি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে বয়রাহালা নদীর ওপর সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯৫ মিটার ও প্রস্থ ১২ ফুট। প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় আশির দশকের প্রথম দিকে নির্মিত এ সেতু বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর ওপর তিন ফুট করে দুই শতাধিক পাটাতন রয়েছে। পাটাতনগুলো বেশ পুরোনো হওয়ায় জং ধরে গেছে। এ ছাড়া স্থানে স্থানে সরে ফাঁক হয়ে আছে। যানবাহন ওই ফাঁকা অংশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানান, ভারী যানবাহন চলতে চলতে সেতুগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর সেতুর ওপর ভারী যানবাহন উঠলে তা কাঁপতে শুরু করে। সেতুটি পুরোনো হয়ে স্টিলের পাটাতনগুলোয় জং ধরে ফুটো ও পাতলা হয়ে ভেঙে যাচ্ছে। তাতে সওজ কর্তৃপক্ষ পুরোনো বেইলি কেটে জোড়াতালি দিয়ে যায়।
সেতু সরু হওয়ায় একসঙ্গে একাধিক বড় যান চলতে পারে না। একটি ট্রাক বা বাস সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় অপর পাশের যানচালকদের গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। দুই যুগের বেশি সময় ধরে এভাবেই সেতু দিয়ে যান চলাচল করছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলার ২০ হাজারের মতো মানুষ যাতায়াত করে। স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করে কয়েক শ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক মদন ও খালিয়াজুরির হাওর দেখতে যান। কিন্তু সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে মেরামত না করায় সবাইকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ইজিবাইকচালক আবদুল মোতালেব ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘কইয়া (বলে) আর কিতা অইব ভাই, এই বিরিজডি (সেতুটি) খুবই ঝুঁকি। হত্তিদিনই (প্রতিদিন) কুনু (কোনো) না কুনু একছিডেন অয়। এইডার দিহে কেউর কুনু নজর নাই।’
সড়কের বাসচালক রশিদ মিয়া জানান, এই রাস্তা দিয়ে তাঁকে প্রতিদিন মদন উপজেলায় যাতায়াত করতে হয়। বাস নিয়ে সেতুর ওপর উঠলেই তা কেঁপে ওঠে। ট্রাকচালক সোহাগ হাসান বলেন, গাড়ির লোড বেশি হলে খুব আতঙ্কের মধ্য দিয়ে নদীর ওপর সেতুটি পার হতে হয়।
মদন সরকারি হাজী আবদুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ খায়রুল হক মোটরসাইকেল নিয়ে নেত্রকোনা শহর থেকে কলেজে যাচ্ছিলেন। সেতুটি পার হয়ে তিনি বলেন, সেতুটির অনেক পাটাতনের সংযোগস্থল ক্ষয় হয়ে ধারালো ও পিচ্ছিল হয়ে গেছে। ধারালো অংশে লেগে যানবাহনের চাকা অনেক সময় ফেটে যায় এবং পিচ্ছিল অংশে লেগে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। তাই সাবধানে পার হতে হয়। এটি দ্রুত সংস্কারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মদনের কাইটাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ জানান, এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার মানুষ চলাচল করে। ২০ বছর ধরে সেতুটি খুবই হুমকির মুখে আছে। প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সুযোগ পেলেই এটা নিয়ে তাঁরা কথা বলছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, এই বেইলি সেতুটির ওপর সাত টনের বেশি মাল নিয়ে যান চলাচল না করার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউই শুনছে না। ফলে মাঝেমধ্যে পাটাতন ভেঙে যায়। তখন দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বেইলির পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তা অনুমোদিত হবে, তা বলা যাচ্ছে না।