জেটির অভাবে নৌযানে ওঠানামায় চরম ভোগান্তি

কক্সবাজারের মহেশখালীর গোরকঘাটায় কাঠের সাঁকোতে স্পিডবোটের অপেক্ষায় যাত্রীসাধারণ। রোববার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর লোকসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার লাখ। দ্বীপের সঙ্গে কক্সবাজারের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ৮ কিলোমিটারের ‘কক্সবাজার-মহেশখালী সাগর চ্যানেল’। প্রতিদিন ১৭০টি নৌযানে অন্তত ২০ হাজার মানুষ নৌপথ পারাপার করেন। কিন্তু মহেশখালীর গোরকঘাটা কিংবা কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর জেটিঘাটে স্থায়ী জেটি না থাকায় মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সাগর উত্তাল হলে নৌপথ পারাপারে ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। গোরকঘাটাতে নতুন একটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ, ভরাট খাল খনন ও সাগর চ্যানেলে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবিতে স্থানীয় লোকজনের আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে যাত্রী দিন দিন বাড়লেও নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বিশেষ করে সংকটাপন্ন রোগীসহ জরুরি কাজে এই নৌপথ পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মহেশখালী পৌরসভার তথ্যমতে, গোরকঘাটার পূর্ব পাশে ১৯৯৮ সালে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০০ মিটার দীর্ঘ একটি জেটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের ১৫ বছরেও জেটির সংস্কার হয়নি।

বর্তমানে জেটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল ধরেছে, ভেঙে গেছে দুই পাশের রেলিং। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ছয় বছর ধরে জেটির ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়া বলেন, জেটির সামনের অংশ ও দুই পাশে খাল ভরাট হওয়ায় কাদা মাটির চর জেগে উঠেছে। যাত্রীদের নিরাপদ পারাপারে ২০০০ সালে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে জেটির সামনের অংশে আরও ১০০ মিটার সম্প্রচারণ করা হয়। সেটিও অচল হয়ে পড়লে যাত্রীদের জেটি থেকে কাদামাটি ও হাঁটুপানি ডিঙিয়ে নৌযানে উঠতে হতো। তাতে ঝুঁকি ও দুর্ভোগ বেড়ে গেলে ভরাট কাদামাটির ওপর (জেটির মাথায়) নির্মাণ করা হয় ৫০ মিটার লম্বা আরেকটি কাঠের সাঁকো। এখন ভাটার সময় চর ভেসে উঠলে সাঁকোটিও অচল হয়ে পড়ে।

১০ এপ্রিল বিকেলে গোরকঘাটা জেটির শেষ প্রান্তে নড়বড়ে কাঠের সাঁকোর ওপর অর্ধশতাধিক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘাটে নেই স্পিডবোট কিংবা গামবোট। সাঁকোর ওপর দাঁড়িয়ে লোকজন সাগরের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছেন—কখন কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর জেটিঘাট থেকে স্পিডবোট এসে পৌঁছাবে।

সাঁকোতে কথা হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী হিমাংশু ধরের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বললেন, মহেশখালীর পাহাড়চূড়ার আদিনাথ মন্দির দর্শনের জন্য তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। বিকেলে জেটিঘাটে এসে দেখেন কক্সবাজার শহরে ফিরে যাওয়ার নৌযান নেই। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও সমাধান মিলছে না। তাতে দুশ্চিন্তা হচ্ছে তাঁদের।

বিকেল পাঁচটার দিকে একটি স্পিডবোট আসে। হুড়োহুড়ি করে শেষ পর্যন্ত তাতে নয়জন উঠতে পারলেন। বাকিরা দাঁড়িয়ে রইলেন সাঁকোর ওপর। তখন সাঁকোটি দুলছিল।

ঘাটের ইজারাদার এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নড়বড়ে সাঁকো ভেঙে পড়ার শঙ্কা জানিয়ে যাত্রীদের সরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। যাত্রীদের মাথায় তখন একটাই চিন্তা—কখন সাগর চ্যানেল পাড়ি দিয়ে শহরে পৌঁছা যাবে। সন্ধ্যা ছয়টার পর এই নৌপথে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর জেটিঘাটে যাত্রীদের নৌযানে উঠতে হয় একাধিক নৌকার ওপর দিয়ে হেঁটে

এদিকে কক্সবাজার শহরের ৬ নম্বর জেটিঘাট পারাপারে বিআইডব্লিউটিএ একটি পন্টুন বসালেও ভাটার সময় যাত্রীদের নৌযানে উঠতে হয় একাধিক নৌকার ওপর দিয়ে হেঁটে। তাতে নারী ও শিশুদের চরম ঝুঁকি ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। নৌযান সংকটের কারণে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

কক্সবাজার জেলা স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি শহীদুল হক বলেন, এ নৌপথে স্পিডবোট–সংকট নেই। তবে যাত্রী পারাপার নিয়ে মাঝেমধ্যে যেকোনো এক পাশে স্পিডবোট–সংকট দেখা দেয়।

৮ কিলোমিটারের এই নৌপথে স্পিডবোট চলে ১৩০টি। গামবোট আছে ৪০টি। স্পিডবোটে সময় লাগে ১৫ মিনিট, ভাড়া জনপ্রতি ৮৫ টাকা। গামবোটে সময় লাগে ৩০-৪০ মিনিট, ভাড়া পড়ে ৩৫ টাকা।

গোরকঘাটার জেটির পাশে ৭০০ মিটার লম্বা আরেকটি স্থায়ী জেটি নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আধুনিক মানের একটি জেটি নির্মাণ করছে। যেখানে দুই লাইনের যান চলাচল সড়ক, বিশ্রামাগার, প্রার্থনা ও প্রতিবন্ধীদের জায়গা, টয়লেটসহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকছে। জেটি নির্মাণে ইতিমধ্যে মাটির সয়েল টেস্ট (মাটি পরীক্ষা) শুরু হয়েছে।