জামিন পেলেন শ্বশুর-শাশুড়ি, বাদীপক্ষ ক্ষুব্ধ

সুমাইয়া বেগমকে সমাবর্তনের হ্যাট পরিয়ে দেন এক সহপাঠী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে
সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সুমাইয়া বেগমকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়িকে জামিন দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার নাটোরের সিনিয়র দায়রা জজ আদালত তাঁদের জামিন দেন।  

জামিন আবেদনের শুনানিতে হত্যা মামলায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, সুমাইয়া বেগম ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। প্রায় দুই মাস আগে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও মামলার বাদী এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
সুমাইয়ার মা নুজহাত সুলতানা বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়নি। কিছুদিন আগেও ভিসেরা প্রতিবেদন সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে খোঁজ নিয়েছি। প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তা বিশ্বাস করি না। আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা ভেবে দেখব।’

আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, তা বিশ্বাস করি না। আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ প্রতিবেদন (মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন) দেওয়া হয়েছে। কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা ভেবে দেখব।’
নুজহাত সুলতানা, নিহত সুমাইয়া বেগমের মা

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরাসরি আদালতে দেওয়া হয়েছে। আমার কাছে কার্বন কপি আছে। সম্প্রতি বিষয়টি জানতে পেরেছি।’
বিষয়টি বাদীকে জানানো হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, ‘বাদীর সঙ্গে সম্প্রতি কথা হয়নি। তাই বলা হয়নি। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় বাদীকে জানানো হবে।’

২২ জুন রাতে নাটোর সদর উপজেলার হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকায় স্বামী মোস্তাক হোসাইনের বাড়ি থেকে সুমাইয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি শহরের হাজরা নাটোর এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

নাটোরের দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুমাইয়া বেগম হত্যা মামলায় গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ভিসেরা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এর আগে ৬ জুলাই সিআইডির বিভাগীয় (রাজশাহী) ফরেনসিক ল্যাবে সুমাইয়া বেগমের মৃতদেহের ‘রাসায়নিক বিশ্লেষণ’ দাখিল করা হয়। সেখানে সুমাইয়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। ১২ জুলাই নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল মতিনকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। ১৯ আগস্ট তিনি এ ব্যাপারে নাটোর সদর আমলি আদালতে একটি প্রতিবেদন পাঠান। ৩১ আগস্ট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন।

আজ বুধবার দায়রা জজ আদালতে সুমাইয়া হত্যা মামলার আসামি তাঁর স্বামী মোস্তাক হোসাইন, শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেন ও শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা বেগমের জামিন শুনানি হয়। এতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। আদালত সৈয়দ জাকির হোসেন ও সৈয়দা মালেকা বেগমের জামিন মঞ্জুর করেন। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে ওই তিনজন কারাগারে ছিলেন।