প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা তাঁতপল্লির শরীয়তপুরের জাজিরা অংশের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন ভূমির মালিক ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গত বুধবার থেকে অবৈধ ঘর ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
জমি অধিগ্রহণ হবে, এমন খবর পেয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরের মানুষ ক্ষতিপূরণের টাকা বেশি পেতে ওই ঘর নির্মাণ করেছিল ও গাছপালা লাগিয়েছিল। এ নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি ‘শিবচরে প্রস্তাবিত তাঁতপল্লি ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বেশি পেতে এত কিছু’ শিরোনামে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর কাছে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের পাশে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি নির্মাণ করার জন্য প্রস্তাব দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। গত বছরের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শরীয়তপুরের নাওডোবায় ৬০ একর ও মাদারীপুরের কুতুবপুরে ৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় তাঁত বোর্ড গত ২ ডিসেম্বর দুই জেলার জেলা প্রশাসককে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করার আদেশ দেয়। শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করলে নাওডোবার কিছু মানুষ প্রস্তাবিত ওই জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে। জেলা প্রশাসন ওই স্থাপনার আলাদা তালিকা প্রস্তুত করে ক্ষতিপূরণের আওতার বাইরে রাখে। বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ মার্চ জাতীয় সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শরীয়তপুরের অংশ বাদ দিয়ে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরে আরও ৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করে তাঁতপল্লি নির্মাণ করা হবে।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-২ আসনের সাংসদ নূর-ই-আলম চৌধুরী। তিনি ২৬ মার্চ শরীয়তপুর থেকে তাঁতপল্লি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও জাজিরায় প্রস্তাবিত জায়গায় তাঁতপল্লি রাখার দাবিতে শরীয়তপুরের কয়েকটি সামাজিক সংগঠন জেলা শহরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। বুধবার জেলার ২০টি সামাজিক সংগঠন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
এ অবস্থায় ওই স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য এলাকায় মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার থেকে তা অপসারণের কাজ শুরু হয়। বুধবার বিকেল থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নাওডোবার সাকিম আলী পঞ্চায়েতকান্দি গ্রামে অবৈধ ঘর ভাঙার কাজ শুরু হয়।
জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফয়জল হক হাওলাদার প্রস্তাবিত জমিতে দুটি ঘর নির্মাণ করেছিলেন। বুধবার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধে তিনি ওই ঘর ভেঙে সরিয়ে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার ভিটে হারাচ্ছি। বিষয়টি অনেক বেদনার। অনেকে একটু বেশি ক্ষতিপূরণ পেতে ঘর তুলেছে। এখন এ কারণে প্রকল্প সরিয়ে নেওয়া হবে, এটা মেনে নেওয়া যাবে না। তাই আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবৈধ ঘর সরিয়ে নিচ্ছি। আমাদের দাবি থাকবে যেন প্রকল্প অন্য জায়গায় সরিয়ে না নেওয়া হয়।’
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা তাঁতপল্লিতে যে অবৈধ ঘর উত্তোলন করা হয়েছিল, তা ক্ষতিপূরণের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। যাঁরা ঘর নির্মাণ করেছিলেন, তাঁদের বলা হয়েছিল তা সরিয়ে নিতে। অনেকেই সরিয়ে নেননি। তাই প্রকল্পের স্বার্থে ওই ঘর ও স্থাপনা অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।