সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরপারের নলুয়া নোওয়াগাঁও গ্রামের সাজুর আলী ২০১৭ সালে মারা গেছেন। অথচ গত সেপ্টেম্বর মাসে একটি জলমহালে হামলা ও লুটের ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। একই ঘটনায় তিন প্রবাসীকেও আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সময় ওই তিন প্রবাসী বিদেশেই অবস্থান করছিলেন। এ ছাড়া মামলায় চার ব্যক্তির নাম দুবার করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলার এজাহার ঘেঁটে সোমবার এসব তথ্য জানা যায়।
এলাকাবাসী, পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌরসভার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা ভবানীপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মানিক লাল বিশ্বাস ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলতি বছরের ১৬ মার্চ নলুয়া-নোয়াগাঁও ও আলমপুর মৌজার হামহামি জলমহাল (১৪২৮-১৪৩৩ বাংলা পর্যন্ত) ছয় বছরের জন্য ইজারা নেন। ইজারা পাওয়ার পর থেকে ভোগ করে আসছেন তিনি। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে নলুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের মজনু মিয়া, ময়না মিয়া ও সিরাজ মিয়ার নেতৃত্বে ওই জলমহালে হামলা চালানো হয়। জলমহালে নিয়োজিত পাহারাদার আল আমিন, শানুর মিয়া, মিঠু মিয়া, সৈয়বুর রহমান ওরফে বাটুল ও তোরণ মিয়াকে মারধর করে পাঁচ লাখ টাকার মাছ লুট করেন তাঁরা। এ সময় মাছ ধরার একটি নৌকা ভাঙচুর করা হয়েছে। পাহারাদারদের আটকে করে রাখা হয়।
এই খবর পেয়ে মানিক লাল বিশ্বাস ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটকে রাখা পাহারাদারদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মানিক লাল বিশ্বাস ২০ সেপ্টেম্বর ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে জগন্নাথপুর থানায় মামলা করেন।
মামলার ১৯ নম্বর আসামি নলুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের সৌদিপ্রবাসী রাসেল মিয়া (২৮), ৪১ নম্বর আসামি একই গ্রামের সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী জুনায়েদ আহমদ (৪০) ও ৪৯ নম্বর আসামি সংযুক্ত আরব আমিরাতপ্রবাসী সজ্জাদ মিয়া (৪৭)। কয়েক বছর ধরে তাঁরা বিদেশে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া মামলার ৩২ নম্বর আসামি ৫১ বছর বয়সী একই গ্রামের সাজুর আলী ২০১৭ সালে মারা গেছেন।
মামলার আসামির স্বজনদের দাবি, মৃত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এই মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়েছে।
প্রবাসী জুনায়েদ আহমদের বড় ভাই কবির বলেন, ‘আমার ভাই ২০১১ সাল থেকে প্রবাসে আছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাড়ি এসে দু-তিন মাস দেশে অবস্থান করে আবার বিদেশ চলে যায়। অথচ আমার ভাইকে আসামি করা হয়েছে। বিদেশ থেকে সে হামলা করল কীভাবে?’
মৃত সাজুর আলীর বড় মেয়ে আমিনা বেগমের ভাষ্য, চার বছর আগে তাঁর বাবা মারা গেছেন। অথচ তাঁকে আসামি করা হলো। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?
এ বিষয়ে মামলার বাদী মানিক লাল বিশ্বাস বলেন, ‘লিজকৃত জলমহালে হামলা ও লুট করায় আমি মামলা করেছি। তবে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের আসামি করার বিষয়ে আমার জানা নেই।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রণধীর কান্তি দাস বলেন, মামলায় মৃত এক ব্যক্তি ও তিনজন প্রবাসে বসবাসরত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া চার ব্যক্তিকে দুবার করে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে।
জলমহালে হামলা ও লুটের ঘটনায় যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়া উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।