জমি পাউবোর, দ্বন্দ্বে স্থানীয়রা

একটি পরিবার বন্দোবস্ত নিয়ে ৪০ বছর ধরে বসবাস করে। বন্দোবস্ত বন্ধ হলে স্থানীয় দুই ব্যক্তি জমিটি তাঁদের দাবি করে দখলে নিয়েছেন।

বন্দোবস্তের মেয়াদ শেষ হলেও বসবাস করছে একটি পরিবার। এর মধ্যে জমি দখলে নিতে ইটের দেয়াল তুলেছেন স্থানীয় দুই ব্যক্তি। সম্প্রতি গলাচিপার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলীবাগে।
ছবি:  প্রথম আলো

পটুয়াখালীর গলাচিপা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলীবাগ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। পাউবো থেকে বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ওই জমি নিজেদের দাবি করে গাছপালা কেটে দখলে নিয়েছেন। অন্যদিকে ওই জমি বন্দোবস্ত নিয়ে যাঁরা বসবাস করতেন, তাঁরা পুনরায় বন্দোবস্তের আবেদন করেছেন। এখন জমি নিয়ে দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে।

দেয়াল তুলে ওই জমি দখল করা দুই ব্যক্তিকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশও দিয়েছে পাউবো। বসবাস করা পরিবারটি এখনো সেখানেই রয়েছে।

পটুয়াখালী পাউবো কার্যালয়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম জানান, ১৯৭৭ সালে শ্যামলীবাগ এলাকায় ৮২ শতাংশ জমির মালিকানা পায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। জমি অধিগ্রহণ ম্যাপ অনুয়ায়ী এই জমির মালিক পাউবো। পাউবোর কাছে থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে ওই জমিতে মানুষ বসবাস করলেও ২০১৫ সাল থেকে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বন্দোবস্ত নেওয়া পরিবারকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি।

জানা যায়, পাউবো বন্দোবস্ত বন্ধ করার পরই ওই জমি নিজেদের দাবি করে দখলের চেষ্টা করছেন স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী মোস্তফা কামাল ও দুদা মিয়া নামের দুই ব্যক্তি। তাঁরা ওই জমিতে দেয়াল নির্মাণ করেছেন। আর বসবাস করা পরিবারটি মালেক ব্যাপারী নামের এক ব্যক্তির।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে জমি দখলের সত্যতা পান পাউবোর কর্মকর্তারা। এরপর তাঁরা গত ৯ সেপ্টেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা তুলে নিতে মোস্তফা ও দুদা মিয়াকে নির্দেশ দেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, গলাচিপা মৌজায় পাউবোর অধিগ্রহণ করা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমির ওপর অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে ওই দুই ব্যক্তি জমির ক্ষতিসাধন করেছেন। চিঠি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, পাউবোর জমির একাংশে একটি বসতঘরে বাস করছেন আবুল মালেক ব্যাপারী (৬৫) ও তাঁর পরিবার। মালেক ব্যাপারীর ছেলে নেছার উদ্দিন জানান, পাউবোর অধিগ্রহণ করা জমির ১৫ শতাংশ বন্দোবস্ত নিয়ে তাঁরা ৪০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। নিয়মিত পৌর করও পরিশোধ করেছেন। ২০১৫ সালে পাউবো বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধ করলে তাঁরা পুনরায় ভূমি বন্দোবস্ত পেতে আবেদন করেন।

মালেক ব্যাপারীর পরিবারের অভিযোগ, বন্দোবস্ত দেওয়া বন্ধের পরই মোস্তফা কামাল ও তাঁর লোকজন তাঁদের জমিটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। ইতিমধ্যে তাঁদের (মালেকের পরিবার) মারধর করে ও গাছপালা কেটে বসতঘরের সামনে দেয়াল তুলেছেন মোস্তফা ও তাঁর লোকজন।

দখলের অভিযোগের বিষয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ওই জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। মালেক ব্যাপারীর ছেলে নেছার উদ্দিন ওই জমি কিনে নেওয়ার জন্য বায়না করেছিলেন। আমি ছিলাম মধ্যস্থকারী। ওই জমি সরকারের, এমন দাবি তুলে নেছার এখন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’ আর দুদা মিয়া বলেন, ‘ক্রয়সূ্ত্রে আমি ওই জমির মালিক। আমার নামে রেকর্ড হয়ে গেছে।’

তবে পাউবোর গলাচিপা কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিরাজ গাজী বলেন, ওই জমি সরকারের। সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।