ইউপি সচিব সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রতিটি জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য ২০০-৭০০ টাকা করে আদায় করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব তৈয়বুর রহমানের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। তবে ইউপি সচিব এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৌলতদিয়া বাজার এলাকার এক তরুণী অভিযোগ করেন, তিনি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সেখানে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুরোনো জন্মনিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তিনি ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে সম্প্রতি দৌলতদিয়া ইউপিতে যান। ইউপি সচিব তৈয়বুর রহমান সনদটি ডিজিটাল করে দেওয়ার কথা বলে ইউপি কার্যালয়ে সন্ধ্যায় একা যেতে বলেন। ওখানে যাওয়ার পর তিনি নেটওয়ার্কের সমস্যার কথা বলে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে শরীরে হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সচিবের চাহিদামতো ৭০০ টাকা দিয়ে জন্মনিবন্ধন হাতে পান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউপি কার্যালয়ে প্রতিদিন অনেক মানুষ জন্মনিবন্ধনের জন্য আসেন। তাঁদের অনেকের কাছ থেকে সচিব অতিরিক্ত টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুর জন্য ২৫ টাকা ও ৫ বছরের ওপর সবার জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা করে ফি দিতে হয়।
চর দৌলতদিয়ার বাসিন্দা আবুল খাঁ বলেন, সচিব তাঁর কাছ থেকে একটি জন্মনিবন্ধন সনদ ডিজিটাল করার জন্য ৪০০ টাকা নিয়েছেন। তারপরও তাঁকে অনেক দিন ঘুরতে হয়েছে।
শাহাদাৎ মেম্বারপাড়ার রনি খন্দকার বলেন, ‘আমি আমাদের পরিবারের ১০ জনের জন্মনিবন্ধন করেছি। এর মধ্যে প্রথম ছয়জনের জন্মনিবন্ধনের জন্য সচিব ৬০০ টাকা করে নিয়েছেন। পরবর্তী চারজনের জন্মনিবন্ধনের জন্য সচিবকে ২০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন ঘুরে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’
জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধন করে দেওয়ার নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া এবং সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করার অভিযোগের বিষয়ে তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করে এসব রটাচ্ছে। সারা দেশে সার্ভারে সমস্যা থাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সংশোধন করে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই বলে কারও কাছ থেকে কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে না।’
ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে আসা এক তরুণীকে হয়রানি করার অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সচিব বলেন, এ অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন।
ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল বলেন, সচিবের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আরও কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন। পরে ইউপি সচিবকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অস্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলাপ করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দের ইউএনও আজিজুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো ভুক্তভোগী তাঁর কাছে অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।