সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় দুটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। আজ রোববার সকালে উপজেলার কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী রমাপতিপুর গ্রামের গলাখাল বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এর আগে গতকাল শনিবার রাতে নলজুর নদের পানি উপচে আধাকান্দি হাওরে ঢুকে পড়ে। কয়েক দিন ধরে মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢলে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। নিরুপায় হয়ে আতঙ্কিত কৃষকেরা নৌকা দিয়ে পানির মধ্যে আধা পাকা ধান কাটছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, হাওরে ১২০ হেক্টর জমি আছে। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ হেক্টর জমির ধান পেকেছে। বাকি ধান এখনো কাঁচা। রমাপতিপুর হাওরে ১০ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ধান কৃষকেরা কাটতে পারলেও অধিকাংশ ধান কাঁচা থাকায় কাটা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির চাপে আধাকান্দি হাওরে পানি ঢুকছে। গত দুই দিন এলাকাবাসী অনেক চেষ্টা করেও স্থানীয় ব্যক্তিদের নির্মিত বাঁধটি রক্ষা করতে পারেননি। আধাকান্দি হাওরের অধিকাংশ ধান এখনো কাঁচা।
স্থানীয় কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোড়ারগাঁও ফসল রক্ষা বাঁধ, খাশিলা গ্রামের পাঠার হাওর বেড়িবাঁধ, সনুয়াখাই বেড়িবাঁধ, আধাকান্দি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, রমাপতিপুর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, নলুয়ার হাওরের ভূরাখালী বেড়িবাঁধ ও হামহামিয়া জলকপাট বাঁধ রক্ষায় গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার কৃষকেরা কাজ করেন। গতকাল সকালে পাঠার হাওর বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিলে হাওরে পানি ঢুকে পড়ার উপক্রম হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপম দাস, পাউবোর মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী উপস্থিত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন।
খাশিলা গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী কল্যাণ কান্তি দে প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পাঠার হাওর বাঁধটি রক্ষা পায়।
রমাপতিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাহান মিয়া বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ফসল রক্ষা বাঁধটি রক্ষা করা গেল না। কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে আজ বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। হাওরের অধিকাংশ ধান কাটার উপযোগী না হওয়ায় কৃষকেরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
পাটলী ইউপির চেয়ারম্যান আঙ্গুর মিয়া বলেন, আধাকান্দি হাওরের ধান এখনো পাকেনি। গতকাল রাতে স্থানীয় ব্যক্তিদের নির্মিত বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ায় কৃষকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কোনো কোনো কৃষককে নৌকা দিয়ে কাঁচা ধান কাটতে দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা তপন চন্দ্র শীল বলেন, গত ২-৩ দিনে সাতটি ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। হাওরের ফসল রক্ষায় তাঁরা স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বাঁধ রক্ষায় কাজ করেন। হাওরের বোরো ফসল এখনো হুমকির মুখে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন, আধাকান্দি হাওর ও রমাপতিপুর হাওরে পাউবোর কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ নেই। কৃষকেরা স্থানীয়ভাবে সেখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। ফাটল দেখা দেওয়া সব বাঁধ তাঁদের আওতাভুক্ত না হলেও খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বাঁধগুলো রক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে আছেন।
ইউএনও সাজেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়ার তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিন উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়লেও আজ সেটা স্থিতিশীল রয়েছে। আগামীকাল থেকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধগুলো রক্ষায় তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাঁধ রক্ষায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তিনি অভিভূত।