নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাসপিয়া আক্তার ওরফে জান্নাত নিহত হওয়ার ঘটনার ছয় দিন পর আজ মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। এর আগে তাসপিয়াদের বাড়িতে যান তিনি।
মঙ্গলবার বেলা সোয়া একটার দিকে তাসপিয়ার বাড়িতে গিয়ে পুলিশ সুপার তার মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের তাসপিয়ার খুনিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘তাসপিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ইতিমধ্যে কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, গত বুধবার বিকেল চারটার দিকে চার বছরের শিশু তাসপিয়া আক্তারকে চিপস ও জুস কিনে দিতে কোলে নিয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর মালেকার বাপের দোকান এলাকায় যান প্রবাসী আবু জাহের। তিনি তাঁর ভাগনে আবদুল্লা আল-মামুনের দোকানে বসে কথা বলছিলেন। এ সময় পূর্ববিরোধের জের ধরে পাশের দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার সন্ত্রাসী রিমন কয়েকজন সহযোগী নিয়ে সেখানে এসে মামুন ও জাহেরকে গালমন্দ করেন। এ সময় জাহের তাঁর মেয়েকে কোলে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন পেছন থেকে গুলি চালান রিমন। এতে শিশু তাসপিয়া মাথা ও মুখমণ্ডল গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। এ সময় আবু জাহেরও চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে কুমিল্লায় তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।
বাবার কোলে শিশু তাসপিয়া আক্তার ওরফে জান্নাত গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ছয় দিন পর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, যখন শিশু তাসপিয়া খুন হয়েছিল, তখন তিনি ছুটিতে জেলার বাইরে ছিলেন। এ কারণে ঘটনার দিনই সেখানে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার পর তিনি নিহত শিশুর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ওই এলাকায় একটি সচেতনতামূলক আলোচনা সভা করেছেন।
তাসপিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিহত শিশুর পরিবার ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, শিশু তাসপিয়ার হত্যায় জড়িত মূল অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি ভালো খবর দেওয়া যাবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে চারটায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে তাসপিয়ার বাবা আবু জাহের প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ সুপার তাঁদের বাড়িতে এসেছেন। তিনি তাঁর মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন। তখন তিনি পুলিশ সুপারকে তাঁর মেয়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি দাবি করেছেন। এ সময় পুলিশ সুপার অল্প সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ভালো ফলাফল দিতে পারবেন বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। এখন তিনি চেয়ে আছেন পুলিশ সুপার কী করেন।
তাসপিয়ার খুনের ঘটনায় তার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বুধবার বেগমগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় মো. রিমনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে। আগে এই মামলায় পুলিশ তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন এমাম হোসেন ওরফে স্বপন (৩০), জসিম উদ্দিন ওরফে বাবর (২৩) ও দাউদ নবী ওরফে রবিন (১৭)। পুলিশ এখনো মামলার প্রধান আসামি রিমনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।