ভ্যান গাড়ি চালায় তাহাজ্জত সম্পা। বয়স ১১ বছর। কোমল হাতে ব্যাটারিচালিত ভ্যানের কঠিন হ্যান্ডেল নিয়ন্ত্রণ করেই চলছে তার বেঁচে থাকার লড়াই। ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হয়, তা দিয়ে চলে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও সংসারের খরচ।
তাহাজ্জত সম্পাদের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার নাকাটি গ্রামে। সে নাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। তার পরিবারে চার সদস্য। পাঁচ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পার বাবা শফিকুল ইসলাম (৪০) স্বাভাবিক চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েন।
শফিকুল ইসলাম ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। দুর্ঘটনার পর অচল হয়ে পড়েন তিনি। অথই সাগরে পড়ে সংসার। এরই মধ্যে বড় মেয়ে সুমি আক্তারের বিয়ে হয়ে যায়। সংসারের হাল ধরতে বছরখানেক আগে ছোট মেয়ে সম্পা শুরু করে বাবার ভ্যান গাড়ি চালানো। শফিকুলের দাবি, দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। টাকার অভাবে এখন চিকিৎসা প্রায় বন্ধের পথে। প্রতিদিন তাঁর ২০০ টাকার ওষুধ লাগে। এক বেলা খেলে, আরেক বেলা তাঁদের না খেয়ে থাকতে হয়। এমন অবস্থায় ছোট মেয়ে ভ্যান চালাতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার নাকাটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সম্পা ব্যাটারিচালিত ভ্যান গাড়ি নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় আছে। আলাপকালে সম্পা জানায়, গাড়ি ভালোই চালায় সে। ভাড়া নিয়ে জামালপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে যায়। এভাবেই চলছে তার জীবনযুদ্ধ। পরে সম্পাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর। সেই ঘরে সবার বসবাস। তার বাবা বিছানায় শুয়ে আছেন।
স্বামীর চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্বল সব বিক্রি করেছেন সম্পার মা নেবুজা খাতুন। অর্থের অভাবে কেবলই খারাপের দিকে যাচ্ছিল সংসার। সম্পা বলে, ‘মা-বাবার প্রতিদিন কষ্ট দেখে খারাপ লাগত। আমরা অনেক দিন না খেয়েও থেকেছি। প্রতিদিন মা ঘরে কান্না করত, টাকার অভাবে অনেক সময় বাবার ওষুধ কেনা হতো না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাবা চোখের পানি ফেলত। পরে নিজেই ভ্যান চালানো শুরু করি।’ ভ্যান চালিয়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয় বলে জানায় সম্পা।
সম্পার স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছাবিয়া সুলতানা বলেন, মেয়েটির কাছ থেকে এখনকার ছেলেমেয়েদের শেখার আছে। এই বয়সে সে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। মেয়ে হয়েও অনেক কিছু করা যায়, সেটার দৃষ্টান্ত সম্পা। সে লেখাপড়াতেও অনেক ভালো। খুব মিশুক মেয়ে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও সে খুব ভালো।
সম্পার মা নেবুজা খাতুন বলেন, প্রথম দিকে গ্রামবাসী মেয়েকে নিয়ে নানা কথা বলত। মেয়েমানুষ হয়ে ভ্যান গাড়ি চালায়। মেয়েকে বিয়ে করবে কে, তখন খুব খারাপ লাগত। এ নিয়ে ঘরে বসে কান্নাও করতেন। তবে এখন তিনি মেয়ের জন্য গর্ব করেন।
চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন সম্পার বাবা শফিকুল ইসলাম। হাসপাতাল থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁর পায়ের অস্ত্রোপচারের জন্য তিন লাখ টাকা দরকার। মেয়ের আয়ে কোনোমতে চলে সংসার ও তাঁর চিকিৎসা। চিকিৎসার টাকা কোথায় পাবেন, সেটা ভেবেই দুর্বিষহ দিন কাটে তাঁর।