রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে গোদাগাড়ী উপজেলার ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর বিয়ে হয়েছে। আজ শনিবার সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিল তাঁদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া নয় বছরের ছেলে। বিয়ের শর্তে ছেলেটির আট বছর ধরে কারাগারে বন্দী বাবার জামিন পাওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্ষণ মামলার আসামি ও ভুক্তভোগীর মধ্যে বিয়ের আয়োজন করতে রাজশাহী কারাগারের তত্ত্বাবধায়কের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত ২২ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিয়ের পর সে বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। আদালত উভয়পক্ষের সম্মতিতে এ আদেশ দেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা আদালতের নির্দেশে এই বিয়ের আয়োজন করেন। আজ বেলা ১১টার দিকে কনেপক্ষকে কারাফটকে আসার সময় দেওয়া ছিল। নির্ধারিত সময়ের একটু পরে কনেসহ দুই পক্ষের ১৪ জন কারাফটকে উপস্থিত হন। তাঁদের কারা তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে তাঁর কার্যালয়ে বসানো হয়।
কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারের জানালা পথে বন্দীরা কনে ও তাঁর ছেলেকে একনজর দেখার জন্য ভিড় করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানালার পাশে সাদা পাঞ্জাবি পরে বর এসে দাঁড়ান। জানালার অপর পাশে তাঁর ছেলেকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ছোট ছেলেটি ভাবলেশহীনভাবে ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে, যদিও বন্দী থাকা বাবা হাসিমুখেই ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হিন্দু বিয়ে নিবন্ধক বর ও কনের সই নেন। পুরোহিত বিয়ের মন্ত্র পাঠ করেন। মালাবদলে সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। কারা তত্ত্বাবধায়ক কারাগারের পক্ষ থেকে কনের হাতে উপহার হিসেবে একটি কাতান শাড়ি তুলে দেন।
জানতে চাইলে বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ে হয়ে ভালো লাগছে। দোয়া করবেন সারাটা জীবন যেন সুখে–শান্তিতে কাটাতে পারি।’ কনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ‘ভালো লাগছে’ বলে হাসি দিলেন। আর কিছু বললেন না।
জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক সুব্রত কুমার বালা বলেন, এই কারাফটকে কোনো বন্দীর বিয়ের কথা তাঁর জানা নেই। তাঁর ধারণা, এটাই প্রথম বিয়ে। এই বিয়ে তিনি ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছেন। অতিথি ও কর্মচারীদের মিষ্টিমুখ করানোর ব্যবস্থা করেছেন। দ্রুত বিয়ের প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ওই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আত্মীয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১১ সালে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু ওই ব্যক্তি বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে ওই বছরের ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ী থানায় মেয়েটি ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচার শেষে ওই বছরের ১২ জুন ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। রায়ে বলা হয়, যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তখন ওই মেয়ের বয়স ছিল ১৪ বছর।
২০১২ সালে রায়ের পর থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে বন্দী আছেন। তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। ২২ অক্টোবর আবেদনের ওপর শুনানির সময় তাঁর আইনজীবী জানান, আসামি ও ভুক্তভোগী নারী বিয়েতে সম্মত। এ অবস্থায় হাইকোর্ট কারাফটকে বিয়ের আয়োজন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।