বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলেন রাহিম আহমদ (১৮)। অভাব-অনটনের সংসারে হাল ধরতে গাড়ি চালানো শিখছিলেন তিনি। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রোববার তিনি মারা যান। তাঁর অকালমৃত্যুতে মা-বাবা পাগলপ্রায়।
রাহিম মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার হালগরা গ্রামের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিনের ছেলে। রোববার বিকেলের দিকে রাহিমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে নাজিম ও তাঁর স্ত্রী রিমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদছেন। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিলাপ করতে করতে রিমা বেগম বলেন, ‘রাহিম কইত, “আম্মু চিন্তা করিও না, গাড়ি চালানি শিখিলাইছি। কয় দিন পরে রুজি করমু। আব্বার কষ্ট কমব।” আমরার সব শেষ হই গেল!’
লাভলী নামের এক মেয়ে আছে নাজিম-রিমা দম্পতির। লাভলী স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণিতে পড়ে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুড়ীর হালগরা বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান আছে নাজিম উদ্দিনের। দোকানের আয় দিয়ে টেনেটুনে চার সদস্যের পরিবার চলে। রাহিম বেশি লেখাপড়া করেননি। কিছুদিন আগে তিনি স্থানীয়ভাবে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ২৯ এপ্রিল ইউসুফ আলী নামের এক প্রতিবেশীর অনুরোধে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি (কার) নিয়ে গ্যাস ভরার জন্য পার্শ্ববর্তী কুলাউড়া পৌর শহরে অবস্থিত সিএনজি স্টেশনে যান। সেখান থেকে ফেরার সময় কুলাউড়ার রামপাশা এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে আসা কাভার্ড ভ্যান ওই গাড়িতে জোরে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত চলে যায়। এতে গাড়িটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এক অটোরিকশাচালক রাহিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। খবর পেয়ে স্বজনেরা হাসপাতালে ছুটে যান। অবস্থার অবনতি ঘটায় রাহিমকে সিলেটে নগরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন তিনি। রোববার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে মারা যান তিনি। পরে স্বজনেরা লাশ নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। বিকেল পাঁচটার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।
নাজিম উদ্দিন বলেন, স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসা করান। ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবেন, এমনটাই তাঁর আশা ছিল। এখন ছেলেকে হারালেন, ধারদেনা কীভাবে শোধ করবেন, কিছুই বুঝতে পাচ্ছেন না।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি তাঁরা জানেন। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।